রূপগঞ্জের পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নরমেধযজ্ঞ, নারায়ণগঞ্জ
১২ তারিখে সকাল ১০টায় পাকসেনাদের গানবোট থামে মোড়াপাড়া বাজারে। তাদের আমন্ত্রণ জানাল স্থানীয় রাজাকারেরা। কথাবার্তা শেষ করে অগ্রসর হলো গ্রামের দিকে। শুরু হলো হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকের ওপর অত্যাচার। পুড়িয়ে দেয়া হলো হিন্দু এলাকা। নিরীহ, গোবেচারা মানুষগুলোকে জড়ো করল এক জায়গায়। সারাদিন খানসেনারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে গেল। হিন্দু এলাকাটা একটি শ্মশানে পরিণত হল। বারুদ আর পোড়া গন্ধে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেল। রক্তে মাটি ভিজে লাল বর্ণ ধারণ করল। হিন্দুপাড়ার একটি শিশুও সেদিন আর জীবিত রইল না।
পাকসেনারা রাজাকারদের সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জামালউদ্দীনের বাড়িতে হামলা চালায়। তাকে না পেয়ে ধরে নিয়ে যায় তার বড় ভাই গিয়াসউদ্দীনকে। শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন।
চারতালু গ্রামের রাজাকার মতিউর রহমান মতি ছিল নরপশুদের প্রাণের দোসর। ভোলাব প্রাইমারি স্কুলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করার জন্যে পাকসেনাদের খবর পাঠায়। ২৭ নভেম্বর শেষ রাতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আক্রমণ করল বর্বররা। হানাদারদের তাণ্ডবলীলায় হতভম্ব হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা। বকুল বীরত্বের সাথে লড়ে শহীদ হন। হানাদারেরা সাইম সরকার ও অগাস্টিন প্যারেলকে ধরে নিয়ে গেল নরসিংদী, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বের করার জন্যে অগাস্টিন প্যারেলের ওপর চালাল নির্যাতন, শরীরে বেয়নেট চার্জ করে ক্ষতস্থানে লবণ লাগিয়ে বীভৎস উল্লাসে মেতে ওঠে নরপশুরা। এত অত্যাচারের পরও একটি কথা বেরোয়নি অগাস্টিনের মুখ ফুটে। ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষত-বিক্ষত করল। এত কিছুর পরও শত্রুদের মন টলল না। গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিল অগাস্টিনের দেহ।
পাকসেনা ও রাজাকারদের অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেল। পাকসেনারা ভুলতা বাজার, দিঘিরপাড়া গ্রাম, গোলাকান্দাইল গ্রাম, সাওঘাট গ্রাম, বালিয়াপাড়া গ্রাম, কাঞ্চনের অনেক বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত লোকদের।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত