রানীগঞ্জ বাজার গণহত্যা, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শ্রীরামসির ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পরদিন অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর সকাল এগারোটার সময় পাকহানাদার বাহিনীর আগমন ঘটে রানীগঞ্জ বাজারে। এদের এখানে নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে কয়েকজন দালাল। পাক সৈন্যদের সাথে ছিল অসংখ্য রাজাকার ও আলবদর। জগন্নাথপুর থানা সদর থেকে পাঁচ মাইল দূরবর্তী রানীগঞ্জে নেমে তারা বাজার ঘেরাও করে। দুশর বেশি লোককে ধরে বাজারে নিয়ে গিয়ে এক লাইনে দাঁড় করায়। সারিবদ্ধ লোকজনকে তখন রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে।
বাজার থেকে নেয়ার আগে নিরীহ ব্যবসায়ীদের শান্তি কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি ছোড়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের সাথে একটি বাক্যও বিনিময় হয়নি। খানসেনাদের হাতের রাইফেলগুলো গর্জে ওঠার সাথে সাথে আনন্দের আতিশয্যে আপ্লুত হয় তাদের দলপতি সুবেদার সরফরাজ খান। কালবিলম্ব না করে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেয় তার অধীনস্থ সৈন্যদের। সাথে সাথে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করল স্থানীয় বাজারকে। ভস্মীভূত হলো ১২৮টি দোকান, ধান ভাঙার কল, করাত কল এবং পবিত্র মসজিদও। প্রাণ হারালেন প্রায় দেড়শ লোক।
পঞ্চাশ জনেরও বেশি লোক সেদিন পাকবাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে মুত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত পরাভূত হন। বাদবাকিরা তাঁদের দেহের কোনো কোনো অঙ্গ হারিয়ে আজও বেঁচে আছেন।
তবে দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, পাকবাহিনীর নির্দেশে যখন রানীগঞ্জ বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের লেলিহান শিখা, তখন জল্লাদ বাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর এবং দালালদের পাশাপাশি এলাকার বহু লোকজন লুটপাটে অংশগ্রহণ করে। কুশিয়ারার তলদেশে তলিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের লাশ যখন এক এক করে ভেসে উঠছে, তখন তাঁদের সেই লাশের ওপর দিয়েই কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত