রশুনিয়া শিংবাড়ী গণহত্যা, মুন্সিগঞ্জ
১৯ মে পাক সেনাবাহিনী মুন্সিগঞ্জ জেলার (মহকুমা) সিরাজদিখান থানা দ্বিতীয়বারের মতো দখল করে নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিকাণ্ড ও হামলা চালাতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ মে রাতে পাকসেনারা একই থানার রশুনিয়া গ্রামে হামলা চালায়। গ্রামের রাম শিং-এর বিশালাকার দোতলা দালানটি ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত শরণার্থীদের অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাকসেনারা এই বাড়িতে প্রবেশ করে নিরীহ, নিরস্ত্র, অরাজনৈতিক, অসহায় ৯ জন লোককে হাত পা বেঁধে বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে।
রশুনিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় কান্ত বাবু সেদিনই পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। রাত শেষ হওয়ার পরে রাম শিং-এর বাড়ির ধবধবে সাদা মাটির উঠানে গাদা গাদা লাল রক্তমাখা রাম শিং, কান্ত বাবু, জীবন ঘোষ ও অন্যদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখে সমগ্র এলাকাজুড়ে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সিরাজদিখানবাসী এই প্রথম পাকবাহিনীর পৈশাচিক ও বর্বরোচিত নিষ্ঠুর হামলার প্রত্যক্ষ করে। সর্বজন পরিচিত রাম শিং-এর মস্তক উড়ে যাওয়া লাশ, কণ্ঠনালি ভেদ করে যাওয়া কান্ত বাবুর লাশ-এর কথা মনে করে প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন আজও শিউরে ওঠেন।
[১৭৮] হাসিনা আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত