রাজনগর উপজেলা গণহত্যা, মৌলভীবাজার
রাজনগর মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। এ উপজেলার জনগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছেন মনির আহমদ, বাতির মিয়া, প্রদীপ দাস, সুদর্শন দেব, শিশির দেব, সত্যেন্দ্র কুমার দেব, অবনী কুমার দেব, টেনাই মিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজনগর উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে দালালরা সহায়তা করেছে আবুল মিয়া নামের একজন দালাল। সে নিজের বোনকেই তুলে দিয়েছিল পাকহানাদার বাহিনীর হাতে। আলাউদ্দিনের প্ররোচনাতেই পাকবাহিনী হত্যা করে পাঁচগাঁওয়ের প্রায় ৮০ জনকে। দুদু মিয়া ও বারিক মিয়াদের কারসাজিতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় কলাগাঁওয়ের ধরের বাড়িতে। আবদুল মিয়া পঞ্চেশ্বরের দুজনকে ধরে পাকবাহিনীর হাতে সোপর্দ করে। তারপর তাঁদের ভাগ্যে জোটে একটি করে বুলেট। তাদের হত্যা করে চাঁদনিঘাটের সেতুর কাছে। দালাল আবদুল মতিন পাঁচগাঁওয়ের হিরন্ময় দাশকে ধরে পাকবাহিনীর হাতে সোপর্দ করলে তাঁকেও হত্যা করা হয়। থানার দর্জিমহল গ্রাম থেকে বেশ কজনকে ধরে এনে গোবিন্দবাটিতে হত্যা করে তারা।
রাজনগর থানায় পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের আগমন ঘটে ৭ মে। গোবিন্দবাটি পৌঁছে ওই দিনই তারা গুলি করে এক ছাত্রকে লক্ষ্য করে। গুলি তাঁর শরীরে বিদ্ধ না হলেও শামসুল আলম নামের রাজনগর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এই ছাত্র ধরা পড়েন পাক হায়েনাদের হাতে। তারপর তাকে কুলাউড়া নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকার বাইরেও রাজনগর থানার বহু কৃতী সন্তানকে হত্যা করে পাকিস্তানি হায়েনারা।
শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় মছদ্দর আলী, আছদ্দর আলী, তজমান আলী, পান্না লাল চক্রবর্তী, জিতেন্দ্র মালাকার প্রমুখের ওপর। এই সাথে ভস্মীভূত করা হয় অসংখ্য বাড়িঘর। লুণ্ঠিত হয় লাখ লাখ টাকার সম্পদ। আর শ্লীলতাহানি করা হয় বহু মা ও বোনের। টেংরায় হত্যা করা হয় অপ্রকৃতিস্থ একজনকে। আর ৭ মে এখানকার আরো দুজনকে হত্যা করা হয় কুলাউড়ার চাতলগাঁও গ্রামে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত