যশোর সেনানিবাস বধ্যভূমি ও গণকবর, যশোর
যশোর সেনানিবাস ছিল পাকিস্তানি সেনাদের মূল নির্যাতন ও হত্যা কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর এই সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে অসংখ্য গণকবরের সন্ধান। বেশ কয়েকটি স্থানকে তারা বধ্যভূমি হিসেবেও বেছে নিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষকে ধরে নিয়ে প্রথমে নির্যাতন করে পরে হত্যা করা হয়েছিল।
এসব গণকবর এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে ছিল মাথার খুলি, মেয়েদের জুতা, কাপড়-চোপড়, মাথার চুল, চুড়ি ইত্যাদি। প্রতিদিন রাতে বাঙালি নারীরা এখানে পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। যশোর শহরের ঘোপ, ইপিআর সেক্টর হেড কোয়ার্টার ইত্যাদি এলাকাতেও গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। ঝিকরগাছা থানার চৌগাছা সরকারি ডাকবাংলোর পেছনেও রয়েছে ২০-২৫টি গণকবর। এখানে শতাধিক মানুষকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। এখানে বন্দিদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে অর্ধমৃত করে একটি চটের বস্তায় ২-৩ জন করে ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করে কপোতাক্ষ নদে ফেলে দিত। এ নদের ওপর একটি ব্রিজ ছিল। ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে বেয়নেট চার্জ করে পাকবাহিনী বাঙালিদের নিচে ফেলে দিত। এই নদের তীরে রয়েছে অসংখ্য গণকবর।
যশোর জেলার মহেশপুর থানা হাসপাতাল ছিল আরেকটি নির্যাতন ও হত্যা কেন্দ্র। পাকসেনারা মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ, খালিশপুর ইত্যাদি এলাকা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে হাসপাতালে একটি কক্ষে আটকে রাখত। তারপর প্রতি রাতে হাসপাতাল এলাকার মধ্যে ৫০-৬০টি গর্তে কাউকে জবাই করে, কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, আবার কাউকে গুলি করে হত্যা করে ফেলে দিত। মেয়েদের পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। এই হাসপাতাল এলাকাতেই ৫০০ নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
[১৪] ডা. এম.এ. হাসান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত