মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজ নির্যাতন কেন্দ্ৰ, ঢাকা
১৯৭১ সালের মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজ ছিল পাকবাহিনীর অন্যতম নির্যাতন ও হত্যা কেন্দ্র। তারা অসংখ্য মানুষকে নির্যাতনের পর হত্যা করে। জানা যায়, এই কেন্দ্রের বন্দিকে হত্যা করে তাদের চোখ তুলে রাখা হয়। আউয়াল হোসেন খান দীর্ঘ ৩৩ বছর এই কলেজে লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যুদ্ধের সময় তিনি এই কলেজে নিয়মিত অফিস করতেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরুর পর মাস শেষে বেতন নিতে কলেজে যাবার পর দেখলেন পাকসেনারা সেখানে ঘাঁটি করেছে। হেড ক্লার্ক তোফাজ্জেল হোসেন সাহেব, বরকত সাহেব (শিক্ষক) ইন্সট্রাকটর ফজল খান প্রমুখ ভেতরে আটকা পড়ে আছে। যে-ই ভেতরে যাচ্ছে, তাকেই কাস্টোডিতে আটকে রাখছে। এ অবস্থায় তিনি আর ভেতরে যাননি। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। তখনও ক্যাম্প ছিল। তবে আমাদের অফিস করতে দেয়া হলো টিটি কলেজের হোস্টেলে। দেখলাম মেয়েদের হোস্টেলে কিছু বাঙালি ইপিআর সদস্যকে তারা আটকে রেখেছে। জানা গেল ওদের অফিসার র্যাংকের সকলকেই পাক আর্মিরা মেরে ফেলেছে। এ অবস্থায় আমরা যখন বাইরে ঘুরতাম তখন তারা বেরুনোর জন্য কাঁদতেন, পাগলের মতো করতেন কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না।
তিনি আরও বলেন, টিটি কলেজ থেকে নিজেদের হোস্টেলে ফিরে আসার পর দেখলেন, ছেলেদের হোস্টেলের সিঁড়ির ফাঁকে, সিঁড়িতে, চতুর্দিকে শুধু রক্তের ছাপ। দেয়ালে বিচ্ছিন্ন বহু হাতের শুকনো রক্তের ছাপ। তিনতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত রক্তের স্রোত শুকিয়ে গেছে। জানা যায়, এঁদের পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। শুকনো রক্তের ছাপগুলো সম্ভবত নিহতদের বেঁচে থাকার শেষ আকুতির চিহ্ন, দেখেছেন মেয়েদের লম্বা চুল পড়ে রয়েছে। এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের ধরে আনা হতো। প্রিন্সিপালের কোয়ার্টারে তখন এক মেজর থাকত। একদিন এক পিয়ন সেখানে ঝাড়ু দিতে গিয়ে ব্লাউজ ও পেটিকোট পরা একটি সুন্দরী মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। কোথা থেকে তাঁকে ধরে আনা হয়েছে তা জানা যায়নি।
যুদ্ধ শেষে পাকসেনারা চলে যাবার পর কলেজের মাঠে ঘাসের মধ্যে অনেক হাড়গোড়, মাথার, খুলি, ব্যবহার্য কাপড়, স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন।
[৩৪, ১৩৭] দিলরুবা বেগম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত