You dont have javascript enabled! Please enable it! মুড়াপাড়া গণহত্যা | নারায়ণগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

মুড়াপাড়া গণহত্যা, নারায়ণগঞ্জ

মুড়াপাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার একটি ইউনিয়ন। সেদিন ছিল ১২ এপ্রিল ১৯৭১। মিলিটারিরা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার আব্দুর রহিম, মুড়াপাড়া জুট মিলের মালিক গুল বখস ভূঁইয়া, লতিফ, লাল মিয়ার সহায়তায় গানবোটে চড়ে মুড়াপাড়া বাজারে নামে। আব্দুর রহিম পাকসেনাদের পূর্বে রূপগঞ্জ থানার ম্যাপ ও তথ্য সরবরাহ করে। সকাল ১০টার দিকে মিলিটারিরা মুড়াপাড়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো এ জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। পালাবার পথ রুদ্ধ। পাকসেনারা একটি ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করে তুমি হিন্দু না মুসলমান। মেয়েটি হিন্দু বললে একজন পাক আর্মি তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আক্রমণ করে। তাদের মেশিনগানের আওয়াজ, গ্রামবাসীর আর্তচিৎকার, কান্না, আহাজারিতে পুরো মুড়াপাড়া গ্রাম প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। হিন্দু বাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় প্রজ্বলিত হতে থাকে হিন্দুপাড়া। নিরপরাধ সরল-সহজ হিন্দু লোকগুলোকে ধরে এনে জড়ো করে মায়া সিনেমা হলের সামনে। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন একটি হিন্দু শিশুও রক্ষা পায়নি। হিন্দু নিধন করাই ছিল পাক আর্মিদের মূল পরিকল্পনা। ৫-৬ জনকে একই রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে হত্যা করে। লাশগুলো মুড়াপাড়া নগরের প্রফুল্ল মাস্টারের বাড়ির বাঁশঝাড়ের সামনে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে।
ঋষিপাড়ার ১৫-১৯ জন মানুষকে একইভাবে পুকুরের পাড়ে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। মুড়াপাড়া হাইস্কুলের সংলগ্ন মন্দিরের মূর্তিগুলো পাকসেনারা গুলি করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধা মো. আল আমিন দুলাল জানান, এই দিনই হানাদাররা মুড়াপাড়া পাইলট স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষক পণ্ডিত রাধাবল্লভ দাসকে তার বাড়ি থেকে ধরে আনে। উলঙ্গ করে নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। পরে অন্যান্য বন্দির সাথে তাঁকেও হত্যা করে।
সারাদিন হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিকেল বেলা ফেরার পথে মিলিটারি মেয়েটিকে কাঁধ থেকে নামায়। মেয়েটি সারাদিনই মিলিটারিদের কাঁধে চড়ে ছিল। ফেরার পথে শয়তানেরা মেয়েটিকে হাঁ করিয়ে মুখের ভেতর গুলি করে। হিন্দুপাড়াটা নিথর, স্তব্ধ হলে গেল। সেদিন একজন মুসলমানও এগিয়ে আসার সাহস পায়নি তাদের বাঁচানোর জন্য।
[১১০] রীতা ভৌমিক

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত