মুসলিম বাজার বধ্যভূমি, ঢাকা
গোটা মিরপুরে বধ্যভূমিগুলোর কথা মানুষ জানলেও ‘মুসলিম বাজার বধ্যভূমি’র কথা কেউ জানত না।
‘মুসলিম বাজার বধ্যভূমি’ ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের নূরী মসজিদ সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। নতুন পিলার তৈরির সময় মাটির নিচে একটি পরিত্যক্ত কুয়ার সন্ধান পান নির্মাণ শ্রমিকরা। কুয়ার মুখটি কংক্রিটের স্লাব দিয়ে ঢাকা ছিল। নির্মাণ শ্রমিকরা স্লাবের অংশবিশেষ ভেঙে তুলতেই কুয়ার মুখ থেকে তিনটি মাথার খুলি ও বেশ কিছু হাড় পান। পরদিন আরও একটি মাথার খুলি ও কিছু হাড় পাওয়া যায়। নূরী মসজিদ সংলগ্ন ওই ফাঁকা জমিটি একাত্তরের বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও বিহারিদের বুলেট ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল এসব বাঙালিকে। উদ্ধারকৃত দেহাবশেষ ও নিদর্শন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের-এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত কুয়া সংলগ্ন এলাকাকে ‘একাত্তরের বধ্যভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং স্থানীয় বাজারের নামের সাথে মিল রেখে নামকরণ করে ‘মুসলিম বাজার বধ্যভূমি’।
‘মুসলিম বাজার বধ্যভূমি’ সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হোসেন মোল্লা জানান, ‘৭১-এ এ অঞ্চলে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চলেছে। ‘নূরী মসজিদটি’ ছিল বিহারি ও জামায়াত নেতাদের পরিকল্পনাকেন্দ্র। মসজিদ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বিষোদগার করা হতো বলে এলাকার অনেকেই এই মসজিদে যেত না। ফলে মসজিদের ভেতর কী হতো তা আমার মত অনেকেরই অজানা ছিল। বিহারিরা বাঙালিদের ওপর বর্বর অত্যাচারের পর হত্যা করত। আমাদের থাকতে হতো লুকিয়ে। কারণ এই এলাকাটি বিহারি অধ্যুষিত ছিল। কোনো বাঙালিকে পেলেই বিদ্যুতের লোহার খাম্বায় (ল্যাম্প পোস্টে) আঘাত করা মাত্রই ল্যাম্প পোস্টের শব্দে সব বিহারি একত্রে বের হয়ে আসত। তারপর ধৃত বাঙালিকে লোহার রড, কখনো কখনো ইট বা পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও জবাই করে হত্যা করা হতো। ওদের হাতে ভারী অস্ত্র এমন কি গ্রেনেড পর্যন্ত ছিল। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করত এগুলো।
তিনি আরও জানান, ‘৭১-এর নূরী মসজিদ সংলগ্ন একটি কুয়া ছিল ওজুর জন্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আমরা মিরপুরে বিশেষ করে এ অঞ্চলে ঢুকতে পারিনি। মসজিদের কুয়াটির কোনো চিহ্ন ছিল না। পুরোটাই মাটি দিয়ে ঢাকা ছিল। এভাবেই ঢাকা পড়ে আছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার এদেশীয় দালালদের বর্বর হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস।
[৬৬] মিরাজ মিজু
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত