You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভবানীপুর গ্রাম গণহত্যা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

একাত্তরের ৮ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ আড়াইসিধা ইউনিয়নের অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রামে পাকবাহিনীর অতর্কিত নির্মম আক্রমণে ভবানীপুর গ্রামের ২০ জন সাধারণ নিরীহ মানুষ শাহাদাৎ বরণ করেন। এ দিন দুপুর একটার সময় পাকবাহিনী তালশহর ক্যাম্প এবং একই সঙ্গে আশুগঞ্জ ক্যাম্প থেকে ভবানীপুর গ্রামে আক্রমণ করে। তালশহর থেকে আসা পাকবাহিনী ভবানীপুর গ্রামে গিয়ে প্রথমেই এ গ্রামের আবছার মিয়ার ছেলে আ. জলিলকে তার বাড়ির পুকুরের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। এর পরপরই পাকহানাদার বাহিনী সরকার বাড়িতে চারদিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে হাজী আ. হামিদকে গুলি করে হত্যা করে। আ. হামিদ তখন গোসল ও অজু করে জোহরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। একই সময় হানাদার বাহিনী আ. হামিদের দুই ছেলে আ. গনি ও মিলন, নাতনি ডলিসহ (আ. গনির মেয়ে) একই পরিবারের চারজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ সময় শহীদ আ. হামিদের পুত্রবধূ (শহীদ আ. গনির স্ত্রী) হাসিনা বেগম তার ডান পায়ে মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। হাজী আ. হামিদের বাড়িতে হত্যাযজ্ঞের পর পাকবাহিনী ভবানীপুর গ্রামে একে একে ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ দিন হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণকারী অন্যরা হলেন-মাওলানা আ. রহমান, আ. মন্নাফ, আবু মিয়া, আহাম্মদ আলী, আ. রহমান, সোনা মিয়া, আ. লতিফ, আ. গফুর, ফুলবানু, ইয়াসিন বেগম, স্বপ্না বেগম, হাসেনা বেগমসহ নাম না জানা তারুয়া গ্রামের ১ জন। হানাদাররা ভবানীপুরে আ. হামিদের বাড়িসহ অসংখ্য বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, ভবানীপুরের পাশের গ্রামে আড়াইসিধায় আওয়ামী লীগ নেতা আ. হামিদ তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতেন- এ খবর পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আড়াইসিধার আ. হামিদের বাড়িতে আক্রমণ চালাতে এসে পথিমধ্যে ভুলক্রমে ভবানীপুরে আ. হামিদের বাড়িতে হামলা চালায় বলে জানা যায়। উক্ত গণহত্যার পর ভবানীপুরসহ আশপাশের সমস্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে লাশ দাফন করার মতো কেউ ছিল না। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ এসে ২০টি লাশ বিভিন্ন বাড়ি থেকে তুলে এনে ভবানীপুর গোরস্তানে জমা করে। কয়েকশত লোক লাশের জানাজা পড়ার জন্য জমায়েত হলে সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে পড়ে পাকবাহিনী আবার আক্রমণ চালাতে আসছে, তখন উপস্থিত জনতা যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত পাকবাহিনীর আগমন না দেখে আশপাশে লুকিয়ে থাকা ২০-২৫ জন মানুষ তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে ভবানীপুর গোরস্থানে লাশগুলো দাফন করে।
[১১৯] শাহজাহান আলম সাজু

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!