ভট্টখামার গণহত্যা, বাগেরহাট
১৩ অক্টোবর বুধবার ২৬ আশ্বিন ১৩৭৮ তারিখ বাগেরহাটের ফকিরহাটের রাজাকার লকপুর ইউনিয়নের ভট্টখামার গ্রামে একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। ঐ গ্রামের নিরঞ্জন দাসের বিধবা স্ত্রী বিজনবালা দাসের পরিবার ছিল তাদের টার্গেট। ঐ মহিলার বাড়ি এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির প্রতি স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারের চোখ পড়েছিল। প্রতিবেশী কয়েকজন রাজাকার কর্তৃক কোনো না কোনোভাবে তাঁকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত বিজনবালা বুঝতে পেরে স্থানীয় পিস কমিটির চেয়ারম্যান কেয়াম ফরাজির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি তাঁর ৩ পুত্র ও ২ কন্যাসহ কলেমা পড়ে মুসলমান হন। প্রায় একই সময়ে মুসলমান হন প্রতিবেশী শশধর দাস।
এভাবে ধর্মান্তরণের ফলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লাভের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে দেখে রাজাকারদের ক্রোধ আরো বেড়ে যায়। তার ফলে ১৩ অক্টোবর বুধবার রাতে রাজাকারদের একটি দল এসে বিজনবালার বাড়িতে এসে হানা দেয়। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে প্রথমে তারা বিজনবালার বড় ছেলে ক্ষিতিশ ও মেঝো ছেলে অজিতকে বেঁধে ফেলে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বিজনবালা তখন তাঁর নিকট সঞ্চিত ২৬০০ টাকা এনে রাজাকারদের দিয়ে পুত্রদের প্রাণ ভিক্ষা চান। টাকা-পাওয়ার পর রাজাকাররা বিজনবালাকেও বেঁধে ফেলে। তারপর তিনজনকে এক দড়িতে আটকে গুলি করা হয়। বুকে গুলি লাগার ফলে ক্ষিতিশ সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। অজিতের হাতে গুলি লাগায় সে পড়ে গিয়ে ছটফট করছিল। তখন একজন রাজাকার ঘরের মধ্যে ঢুকে একটি বঁটি জোগাড় করে সেটা দিয়েই অজিতকে জবাই করে। দুই ছেলের মৃতদেহের পাশে অক্ষত বিজনবালা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন।
[১২৪] স্বরোচিষ সরকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত