বালার খাইল হত্যাযজ্ঞ, রংপুর
১২ এপ্রিল ‘৭১ সোমবার। সময় মধ্যরাত। ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণ-পশ্চিমে ‘বালার খাইল’ এ এসে দাঁড়াল হানাদার বাহিনীর ৩টি ট্রাক। ট্রাকভর্তি চোখ, হাত বাঁধা মানুষ। তাদের একমাত্র পরিচয় তারা বাঙালি। সৈয়দপুর থেকে এসেছে ট্রাক তিনটি। সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর বুটের শব্দ আর অশ্লীল গালিগালাজে আশপাশের যে দু-চারজন মানুষ ছিল নিশুতি রাতে তাদেরও ঘুম ভেঙে গেল। বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঘটনা অবলোকন করবে সে সাহসও নেই তাদের। ভয়ে দেহ যেন প্রাণহীন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকর্তাদের তখন একমাত্র ঘোষণা এবং একমাত্র প্রতিজ্ঞা ‘উই উইল মেক দিস কান্ট্রি এ ল্যান্ড অব প্রস্টিটিউস, এ ল্যান্ড অব স্লেভস, এ ল্যান্ড অব বেগারস্।’
পাকিস্তানিরা তাদের সে ঘোষণাকে কার্যকরার জন্য অসহায় বন্দি ৩ ট্রাক মানুষকে গুলি করে হত্যা করল ‘বালার খাইল’ এলাকায়। এ গণহত্যা থেকে প্রাণে বেঁচে যান ২ সহোদর।
প্রথম অবস্থায় ২৫ জনকে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখে। চলতে থাকে প্রতিরাতে তাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার। পরবর্তী সময়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রায় ৬০ জন সদস্যকে বন্দি করে হানাদার বাহিনী। রাত গভীর হবার সাথে সাথে এসব অসহায় বাঙালির ওপর চালানো হতো নির্যাতন। পাকিস্তানি মেজর জাভেদ এবং ক্যাপ্টেন গুল অত্যাচার চালাত সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ নেতা এবং সে সময়ের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. জিকরুল হককে তারা জিজ্ঞাসা করত শেখ মুজিবের সাথে তার টেলিফোনে কী কথা হয়েছিল। অত্যাচারে অত্যাচারে মৃতপ্রায় ডা. জিকরুল হক পাকিস্তানিদের কোনো কথারই উত্তর দিতেন না। ২৫ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল ১৮ দিন অমানুষিক নির্যাতনের পর রংপুর ক্যান্টনমেন্টের বালার খাইল এলাকায় তাঁদের হত্যা করা হয়।
[১৭৪] মুকুল মোস্তাফিজ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত