বালিয়াডাঙ্গী নির্যাতন কেন্দ্র, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখে খানসেনারা প্রবেশ করে। তারা ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গী যেতে রাস্তার উভয় পাশের দোকানপাট ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
সীমান্তবর্তী থানা হবার কারণে এলাকার অনেকেই প্রথমত ভাবতে পারেনি যে, সহসা খানসেনারা বালিয়াডাঙ্গী আসতে পারে। কিন্তু প্রথম দিনই ৫টি ট্রাকভর্তি খানসেনা ও তাদের দোসরেরা মিলে বালিয়াডাঙ্গী গিয়ে থানা এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে। তারপর স্থানীয় দালালদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতে থাকে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় প্রথমদিকেই শ্যামল বাবুকে হত্যা করে। এরপর থেকে তারা প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে টহল দেয়া শুরু করে ও ছোট পলাশবাড়ী, হাওলা, বেলবাড়ী, লাহিড়ী, বেলহারা, সনগাঁও ধানতলা, কালন্দা, বাসুনিয়া, কাশোয়া খাদেমগঞ্জ, আমজানখোর, কাদসুয়া ও পাড়েয়াসহ সমস্ত এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালাতে থাকে।
তারা লাহিড়ীহাট, বালিয়াডাঙ্গী বাজার, হরিণমারী, খোচবাড়ী, দোলুয়া ও পাড়েয়া নামক স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। এসব ক্যাম্পে মূলত খানসেনারা ছিল না। তারা মাঝে মধ্যে টহল দিতে আসত। আসা-যাওয়ার পথে যাকে সামনে পেত তাকেই হয়ত গুলি করে মেরে ফেলতো নয়তো আমানবিক নির্যাতন চালাত। অবাঙালি বিহারি ও স্থানীয় দালালেরা বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর থেকে যাবতীয় মালামাল, গরুছাগল, হাঁসমুরগি এমনকি ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে আসত। এখানে খানসেনাদের দোসরেরা বৃদ্ধা ও শিশুকন্যার ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জনাব আকবর আলীকে খানসেনারা কোথায় তুলে নিয়ে গেছে বা কী করেছে তা আজও জানা যায়নি।
[৯৫] মোহাম্মদ এমদাদুল হক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত