বেতবুনিয়া গণহত্যা, বাগেরহাট
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার চিংড়াখালী ইউনিয়ন এবং পিরোজপুর জেলার সদর থানার (বর্তমানে ইন্দুরকানি থানার অন্তর্ভুক্ত) পর্তাশী ইউনিয়ন পাশাপাশি অবস্থিত। উক্ত এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি যাতে লুটতরাজের শিকার না হয়, সে জন্য সম্মিলিতভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৯ এপ্রিল তারিখে চিংড়াখালী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে লুটকারীরা হিন্দুদের বাড়ি লুট করতে এলে সম্মিলিত বাহিনী তখন তাদের প্রতিহত করে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ২ জন লুটকারী নিহত হয়। এর ফলে বেশ কয়েক দিন ধরে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে। এর মধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পিরোজপুরে পাকবাহিনী চলে আসে। পাকবাহিনী পিরোজপুরে ঘাঁটি করার সঙ্গে সঙ্গে লুটকারীদের একটি দল গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে এবং দলের হাতে তাদের লোক নিহত হওয়ার কথা জানায়। সেই সঙ্গে এ কথাও জানায় যে বেতবুনিয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ঐ বাহিনীতে বিশেষ সক্রিয়। শেষ পর্যন্ত তাদের অনুরোধে পাকবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল ৬ মে বৃহস্পতিবার পিরোজপুর থেকে গানবোট নিয়ে চিংড়াখালী ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামে চলে আসে।
পাকবাহিনী গানবোট থেকে নেমেই প্রথম আক্রমণ করে যতীন মাঝির বাড়ি। বাড়ির মধ্যে যাকেই পায় তাকেই গুলি করে মারে। গুলির শব্দে অধিকাংশ গ্রামবাসী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সেদিন সেখানে মোট ১০-১২ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছিলেন। গণহত্যার পাশাপাশি পাকবাহিনী সেদিন ঐ গ্রামের শতাধিক ঘরও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেদিন পাকবহিনীর আক্রমণে যেসব পরিবারের লোকজন মারা যায়, শরণার্থী হিসেবে ভারতে যাওয়ার পর তাদের অধিকাংশই দেশে ফিরে আসেনি। কয়েকজন শহীদ ছিলেন বহিরাগত। এঁদের মধ্যে মাত্র ৮ জন শহীদের নাম উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
[১২৪] স্বরোচিষ সরকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত