You dont have javascript enabled! Please enable it!

বেলতলি বধ্যভূমি, কুমিল্লা

কুমিল্লার লাকসাম থানা সদরের একটু দক্ষিণে বেলতলিতে রয়েছে হানাদার পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের আরেক নিদর্শন। বর্বর পশুর দল বেলতলিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত বাঙ্কারের পাশেই মুক্তিপাগল অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। সেখানে খুঁড়লেই এখনো বেরিয়ে আসে একাত্তরের সোনার ছেলেদের হাড়গোড়-কঙ্কাল-করোটি। কুমিল্লা সেনানিবাসের পর বাঙালি নিধনযজ্ঞের বড় ঘটনা ঘটে লাকসামে। লাকসামের চাঁদপুর টোব্যাকো কোম্পানির কারখানাটি ছিল শক্তিশালী ঘাঁটি।
ঘটনার সাক্ষী শ্রীদাম মালী বেলতলির এই বধ্যভূমিতে পশুদের নির্দেশে তিনি মাটিচাপা দিয়েছেন অসংখ্য মুক্তিকামী বাঙালিকে। শ্রীদাম বলেন, ‘৭১-এর ১৫ এপ্রিল ঘাতকরা লাকসাম আক্রমণ করে। পরদিন লাকসাম স্টেশনের প্ল্যাটফরমে কয়েকটি লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে ছিল। তৎকালীন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে ডেকে লাশগুলো সরানোর আদেশ দেন। আমি নিজেই লাকসাম রেলওয়ে জংশনের দক্ষিণে সেগুলো মাটিচাপা দিই। শ্রীদাম আরও জানান যে, পরবর্তীকালে সিগারেট ফ্যাক্টরিতে ঝাড়ুদারের চাকরি করার সময়ও তিনি স্বচক্ষে ওখানে দেখেন পাকসেনাদের চরম নিষ্ঠুরতম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। পাকবাহিনী ওখানে হত্যা করল লাকসামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ একদল বাঙালিকে। তখন ঐ লাশগুলোকে মাটিচাপা দেয়া হয় এই বেলতলির বাঙ্কারের পাশেই। তিনি জানান, ঐ সময় সিগারেট ফ্যাক্টরিতে এক বড় কক্ষে হানাদাররা শতাধিক বাঙালি মেয়েকে আটক করে রেখেছিল। তাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সারাদিন গর্ত খুঁড়ে দিতাম। এ সময়ই মুক্তিযোদ্ধা খালেক সাহেবকে মাটি দেয়ার স্থানটি চিহ্নিত করে রাখি। স্বাধীনতার পর সেই লাশ তুলে তার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করার ব্যবস্থা করি। আমার সঙ্গে তখন কাজ করত ভাই মাখন দাস। নিজের জীবন এবং মা-বাবার জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা বাধ্য হয়ে তখন লাশ মাটিচাপা দেয়ার কাজ করেছি। কত লাশ দুহাতে মাটিচাপা দিয়েছি তার হিসাব মেলাতে পারছি না। সেই হৃদয়বিদারক ও পাশবিক ঘটনার আর এক সাক্ষী শ্রীদামের মামা উপেন্দ্র মালী। ৮০-এর কোঠায় পা দেয়া এ বৃদ্ধ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। শ্রীদাম জানান, সেদিন প্রাণের ভয়ে পাকহানাদারের নির্দেশে লাশগুলো বেলতলি বাঙ্কারের পাশে মাটিচাপা দিতাম। একদিন স্থান সংকুলানের প্রতিবাদ করলে পাকদের দালাল রাজাকাররা আমাকে বেদম মারপিট করেছিল। সেই থেকে আমি আজও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারিনি।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!