You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.25 | বাবলা বনে গণকবর | রাজশাহী - সংগ্রামের নোটবুক

বাবলা বনে গণকবর, রাজশাহী

রাজশাহীর পদ্মার চরে বাবলা বনের গণকবরে পাওয়া গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মীর আবদুল কাইয়ুম-এর লাশ। মাসুমা খানম লিখেছেন: ‘১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর। শীতার্ত রাজশাহী শহর পাকিস্তানি সেনাকবলিত। আতঙ্কে নিশ্চুপ, রুদ্ধশ্বাস পুরো শহর। মীর আবদুল কাইয়ুম তখন নিজের বাসা ছেড়ে তিনটি নাবালক সন্তান আর আসন্ন সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে ঘোড়ামারায় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। রাত ৯টায় বাড়ির দরজায় কড়া নড়ে উঠল। কে যেন তার নাম ধরে ডাকল। তিনি জানালা থেকেই জবাব দিলেন। ওপাশ থেকে কথা বললেন উপাচার্যের অবাঙালি স্টেনো তৈয়ব আলী। জানালেন একজন আর্মি অফিসার দেখা করতে চান। উনি বললেন আমার শরীরটা ভালো নেই, তাকে বাসায় আসতে বলেন। তৈয়ব আলীর জবাব: তারা বাসায় আসবেন না, আপনি রাস্তায় আসুন। আইডেনটিটি কার্ডটা হাতে নিয়ে কাইয়ুম রাস্তায় নামলেন। আর ফিরে আসেননি তিনি। ৩০ ডিসেম্বর পদ্মার চরে এক গণকবরে অনেক গলিত লাশের মাঝে পাওয়া গিয়েছিল মীর আবদুল কাইয়ুমের লাশ। মোটা একটি রশিতে গলায় ফাঁস লাগানো ছিল পরপর ১২ জনের। কোথাও গুলির চিহ্ন ছিল না। হয়ত জীবন্ত মাটি চাপা দিয়েছিল হায়েনারা।’
পদ্মাতীরের বধ্যভূমি গণকবর প্রসঙ্গে মলয় ভৌমিক জানিয়েছিলেন- রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া ক্লাবের পাশে পদ্মাতীরের বাবলা বনে রয়েছে একটি গণকবর। অবহেলিত এই স্থানটি বাঁশের বেড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে পদ্মাতীরের এই বাবলা বনে হত্যা করেছে। এই স্থানে যাদের হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল-তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন রাজশাহীর বুদ্ধিজীবী। অনেক লাশ মাটিচাপা না দিয়ে পদ্মার জলে ভাসিয়েও দেয়া হয়। ডিসেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয় এই বাবলা বনে। স্বাধীনতার পর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বাবলা বনের এই গণকবর থেকে অনেকগুলো লাশ উদ্ধার করে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
[১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত