বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামের গণহত্যা ও গণকবর, বগুড়া
স্বাধীনতা যুদ্ধে বগুড়ার শেরপুরের কল্যাণী, ঘোগা, দাড়িমুকুন্দ ও বাগড়া কলোনির গণহত্যার ঘটনা ভয়াবহ ও মর্মন্তুদ। পাকসেনারা এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমান উল্লাহ খানের বাড়ি জ্বালিয়ে তাদের ধ্বংসলীলা শুরু হয়। দাড়িমুকুন্দ গ্রামের সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হাবিবুর রহমান (৭১) জানান, দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল। মাত্র ৭ জন পাকিস্তানি মিলিটারি এই গ্রামে হানা দেয়। তারা গ্রামের লোকদের ডেকে নিয়ে গ্রামের প্রবেশপথের দুই ধারে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়। একপর্যায়ে গুলি করে হত্যা করে ২৪ জন স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশীকে। তারপর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় দাড়িমুকুন্দ গ্রাম। পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন গুলিতে নিহত ২৬ জনকে ঘটনাস্থলের পাশেই কবর দিয়ে রাখে।
বাগড়া কলোনিতে যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্বাধীনতাকামী গ্রামবাসী মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হলে তাদের ওপর নেমে আসে হায়েনাদের তাণ্ডব। ফরিদ জানান তার পিতা সদর আলী সরকারসহ গ্রামের ২ শতাধিক লোক বাংলার স্বাধীনতার পক্ষে মিছিল নিয়ে গ্রামের পাশের প্রধান সড়কে যান। এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এ খবর পাকসেনাদের কাছে পৌঁছে দেয়। কোনো দিনের ঘটনা তা আজ তার মনে নেই। তখন দুপুর ১২টা। পাক সেনারা এসে মিছিলকারীদের ঘেরাও করে। পরে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মনছেরের ভাটায়। ভাটার ভেতর তাদের লাইন ধরে বসে রাখা হয়। এরপর শুরু হয় পাকসেনাদের বর্বরোচিত কায়দায় হত্যা। প্রথমে বসে থাকা স্বাধীনতকামী অসহায় মানুষদের ওপর বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর আহতদের ওপর চালানো হয় মেশিনগানের গুলি। যে ইটের ভাটায় রাতদিন লেলিহান শিখার উদগীরণ হতো, সেই ভাটা নিমিষেই শহীদদের রক্তে সিক্ত হলো।
এ ঘটনায় প্রায় ৫০-৬০ জন বাঙালি শহীদ হন। তবে গ্রামের পূর্বপাশে একটি ভিটায় এক জায়গায় ১০-১২ জনকে কবর দেয়া হয়েছে বলে গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এ স্থানটি বর্তমানে কয়েকটি তালগাছ দিয়ে ঘেরা রয়েছে।
একইভাবে শেরপুর পৌর শহরে পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালায়। তবে শেরপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সে সময়ে নিহতদের স্মরণে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।
[২৩০] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত