বটিয়াঘাটা গণহত্যা, খুলনা
বটিয়াঘাটা খুলনা জেলার একটা নামকরা স্থান। এখানে একটা সুবৃহৎ বাজার রয়েছে। এ বাজারের কিছু দূরে বাদামতলা গ্রামে একটা ছোট বাজার রয়েছে। এলাকাটা হিন্দু অধ্যুষিত। ৭ মে সেদিন ছিল হাটবার। জমজমাট হাট বসেছে। কেনাকাটা করছে সবাই। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রা নদী। পাকসেনা বা রাজাকার আসার কথা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। হঠাৎ সেখানে যমদূতের মতো হাজির হয় একদল পাক সৈন্য। তারা আসে গানবোটে করে, ভদ্রা নদী দিয়ে। সঙ্গে আসে তাদের দোসরেরা। তারা তাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে। হানাদারেরা গানবোট ভেরায় বাজারের ঘাটে। তারপর নেমে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। সকলে যে যেদিক পারে ছুটে পালায়। যারা পাকসেনাদের সামনে পড়ে তারা গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই সৃষ্টি হয় এক নারকীয় পরিবেশ। আহত নিহত মানুষে ভরে যায় সারা বাজার। বাদামতলা বাজারে ঐ দিন যে কত লোক মারা যায় তা কেউ বলতে পারবে না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা সেদিন নিহতদের সংখ্যা অর্ধ-শতাধিকের কম হবে না। এদের মধ্যে ৭-৮ বছরের একটা কিশোরও ছিল বলে জানা যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে চলে লুটপাট। কেনাবেচা চলছিল পুরাদমে। পাক সৈন্য আসার সংবাদ পেয়ে প্রাণভয়ে যে যেদিকে পারে পালায়। তাই লুটপাটের অবাধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঘটনায় অনেকে আহত হয়। পাক সৈন্যদের গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা অমূল্য রায় ও তাঁর স্ত্রী মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডের সময় স্ত্রীর কোলে ছিল তাঁর শিশুকন্যা। মহিলাটি মারা যাওয়ার পরও অবুঝ শিশুটি তাঁর স্তন পান করছিল। করুণ দৃশ্য পাকসেনাদের সাথে আসা একজন রাজাকারের চোখে পড়ে এবং সে আপুত হয়। সে তাকে নিজের বাড়িতে এনে লালন-পালন করতে থাকে। পরে দেশ স্বাধীন হলে সে তাকে অমূল্য রায়ের আত্মীয়স্বজনের কাছে ফেরত দেয়।
[১২২] শেখ গাউস মিয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত