পিপরাইল চারাবাড়ি ঘাট গণহত্যা ও বধ্যভূমি, খুলনা
ফুলতলা উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের অন্তর্গত পিপরাইল গ্রামের পাশে পিপরাইল খাল অবস্থিত। এ খালের তীরে অবস্থিত জামিরা বাজারে স্থাপিত হয় রাজাকার ক্যাম্প। বাজারের কাছেই রয়েছে খাল পারাপারের চারাবাড়ি ঘাট। এ ঘাটে শত শত বাঙালিকে ধরে এনে হত্যা করে খালে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তাই এ ঘাটটি একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়।
পিপরাইল চারাবাড়ি বধ্যভূমির সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ধামালিয়ার শতাধিক যুবককে প্রতারণার মাধ্যমে হত্যা করে। নকশালদের বাধার কারণে রাজাকাররা আগস্ট মাস পর্যন্ত ধামালিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ডুমুরিয়ার রাজাকার কমান্ডার গাউসুল আযম হাদী ও পিস কমিটির লোকজন রাজাকার ও পাকসেনাদের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে ধামালিয়ায় আক্রমণ চালায়। গ্রামবাসী তা প্রতিরোধ করতে না পেরে পলায়ন করলে তারা ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রাজাকার কমান্ডার ও পিস কমিটির সদস্যরা প্রতারণামূলক এক কৌশল অবলম্বন করে। তারা বিভিন্ন স্থানে সভা করে জনগণকে আশ্বস্ত করে যে, তারা যদি আত্মসমর্পণ করে তবে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে, তাদের কোনো ক্ষতি করা হবে না। আর যদি তা করা না হয়, তবে এভাবে একের পর এক অভিযান চালিয়ে সব কিছু ধ্বংস করে দেয়া হবে। ফলে গ্রামবাসী স্বাভাবিক জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে ও সহায়-সম্বল রক্ষার জন্য তাদের এ মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং গ্রামের সকলে মিলে জামিরা বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় রাজাকাররা তাদের মধ্য থেকে শতাধিক যুবককে বেছে নিয়ে বাকিদেরকে চলে যেতে বলে। বিশ্বাসঘাতক রাজাকাররা পরে এ যুবকদের পিপরাইল চারাবাড়ি ঘাটে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। নিহতদের সকলের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মাত্র ৫১ জনের পরিচয় উদ্ধার করা গেছে।
রাজাকাররা এই ঘাটে এই ধরনের আরো অনেক গণহত্যা সংঘটিত করে। তারা ফুলতলা, ডুমুরিয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে বিভিন্ন সময় অনেক লোক ধরে এনে এখানে হত্যা করে। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকাররা এ ঘাটে শত শত লোককে হত্যা করা হয়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত