পূর্বধলা বধ্যভূমি ও গণকবর, নেত্রকোনা
স্থানীয়ভাবে জানা থাকলেও সরকার সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও দেশবাসীর কাছে আজো অজ্ঞাত এমনি এক গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া থানার তারাইকান্দি গ্রামের ঘাঘটিয়া নদীর পারে। যেখানে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল ঐ গ্রামের ১৪ জন নারী ও পুরুষসহ নাম-ঠিকানাবিহীন ৫০ থেকে ৫৫ জন মানুষকে। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের এক রাতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলে পরদিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। গোলাবারুদের অভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে ফিরতে হয়। ফলে যুদ্ধ শেষ।
শুরু হয় পাক হানাদারদের তাণ্ডবলীলা, গ্রামবাসীদের ওপর নির্মম অত্যাচার। অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেয় তারা তারাইকান্দি গ্রামটি। তাবলীগ জামাতের ধর্মপ্রাণ কয়েকজন মুসল্লি, পথচারী এবং ঐ গ্রামে অবস্থানরত নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয় ঘাঘটিয়া নদীর উত্তর তীরে এনে। সেদিন তারাকান্দিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো হয়ে পড়ে জনশূন্য। নদীর তীরে লাশের পচন দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। স্বজনরা ভয়ে ভয়ে দেখতে আসেন তাঁদের ভাইবোন ও ছেলে বা মেয়ের লাশ।
তেমনি এক লাশের স্বজন আলাউদ্দিন কান্নাজনিত গলায় বলেন, গোলাগুলির ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই। দু দিন পর ফিরে দেখি ঘাঘটিয়া নদীর পাড়ে লাশ আর লাশ। এর মধ্যে আমার স্ত্রী রহিমাও পড়েছিল গুলিবিদ্ধ হয়ে রশিতে বাঁধা অবস্থায়। আমার মতো দু-চারজন ছুটে আসে ঘাঘাটিয়ার পাড়ে। আমরা মিলে আয়োজন করলাম লাশ সমাহিত করার। যেখানে লাশ, তার পাশেই মাটি খুঁড়ে কাউকে শাড়ি কাপড়ে জড়িয়ে, কাউকে কাঁথায় মুড়িয়ে, কাপড়ের অভাবে কাউকে এমনিতেই কয়েকটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে রাতের অন্ধকারেই পালিয়ে যাই।
[৪৪৮] আলী আহমদ খান আইউব
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত