You dont have javascript enabled! Please enable it!

পোমরা গণকবর, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের গণকবর। ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা এখানে ১৩ জনকে জীবন্ত কবর দেয়।
জানা গেছে, ভয়াবহতম ঐ দিনটিতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫০-৬০ জনের হানাদার সেনা পোমরা শান্তির হাটের উত্তর দিকে হিন্দু পল্লী মধুরাম তালুকদার পাড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, প্রৌঢ়-বৃদ্ধদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় পশুর দলটি। এক পর্যায়ে মাত্র ৭ দিনের কন্যা শিশুকে দোলনা থেকে মাটিতে ফেলে রেখে দোলনার রশি খুলে সে রশি দিয়ে এক একে ১৮ জন পুরুষকে বাঁধা হয়। তারপর সবাইকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পোমরা বনবিটের সামনে তাদের আস্তানায়। আসার পথে সকলকে গামছা ও অন্যান্য কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে আনা হয় গরু পেটানোর মতো করে। তাদের পরিণতি ও নির্মমতার কথা ভেবে শত শত নারী-পুরুষ পাকিস্তানি হায়েনাদের পা জড়িয়ে ধরেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। নিয়ে যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে ৫ জনকে পিটিয়ে আধমরা করে ছেড়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যে ৫ জন তখন ছাড়া পেয়েছিলেন তারা হলেন- অশ্বিনী দাশ, হরেকৃষ্ণ দাশ, মনমোহন দাশ, মনীন্দ্র দাশ এবং হরিকিষ্ট দাশ। বাকি ১৩ জনকে পোমরা বনবিটের পেছনে তাদের দিয়ে বিরাট এক গর্ত খুঁড়ে একই গর্তে সবাইকে হাত-পা বেঁধে উল্লাস আর অট্টহাসিতে মাটিচাপা দিয়ে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। সেদিন যে ১৩ জনের জীবন্ত সমাধি হয়েছিল তারা হচ্ছে- মন্টু আইচ, গান্ধী দাশ, রমণী দাশ, হরিপদ দাশ, জগৎ চন্দ্র দাশ, বাবুল দাশ, দুলাল দাশ ও শচীন দাশ।
হানাদারদের হাতে পোমরা গণকবর রচিত হওয়ার দুই দিন আগে মুক্তিযোদ্ধারা পোমরা শান্তির হাটের উত্তরে আধক্রোশ দূরে মধুরাম তালুকদার পাড়ার লোকজনের সহযোগিতায় একটি ৩৩ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ টাওয়ার ধ্বংস করে সমগ্র রাঙ্গুনিয়াকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী ভীষণ বেকায়দায় পড়ে যায় তখন। রাতের অন্ধকারে তাদের অপারেশন চালানো ভীষণ অসুবিধা হচ্ছিল। দিনের বেলায় রাজাকাররা তাদের জায়গা চিনিয়ে দিয়ে এলেও রাতে হদিস হারিয়ে ফেলছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রতিশোধ নিতেই হিংস্র হায়েনার দল পোমরা গণকবর সৃষ্টি করে। রাজাকাররা পাকিস্তানি হায়েনাদের দেখিয়ে দিয়েছিল মধুরাম তালুকদার পাড়ার লোকজনদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা কাজটি করেছিলেন। এর কদিন পরেই পোমরা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হলে গণকবরটি খুঁড়ে গ্রামবাসী লাশ দেখা বা তুলে আনার চেষ্টা চালালেও পচা দুর্গন্ধযুক্ত বীভৎস লাশগুলো তাদের পক্ষে তুলে আর সৎকার করা সম্ভব হয়নি।
[৪২৩] এম. এ. কোরেশী শেলু

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!