পারুলিয়া গণহত্যা, বাগেরহাট
বাগেরহাট থেকে যাওয়া অনেক শরণার্থী তদানীন্তন খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার পারুলিয়া নামক স্থানে নিহত হয়। এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সাতক্ষীরা শহরের ২৫-৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে দেবহাটা থানায় পারুলিয়ার অবস্থান। স্থানটির বুক চিরে প্রবাহিত একটি খাল। এ খালের ওপর একটা ব্রিজ রয়েছে, যা পারুলিয়া ব্রিজ নামে পরিচিত। এর তিন-চার কিলোমিটার পশ্চিমেই রয়েছে উসকো বর্ডার। ওপারে টাকি যা চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত। মাঝখানে ইছামতী নদী। অন্যান্য অনেক স্থানের মতো বাগেরহাটের বহু শরণার্থীও তখন ঐ পথ দিয়ে ভারতে যাচ্ছিল। এরা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে রওনা দিয়েছিল নৌকায়। পরে বদরতলা নামক স্থানে নৌকা ফেলে স্থলপথে বর্ডার পার হওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছিল। তারা নৌকা ছেড়ে দিয়েছিল নৌপথের বিভিন্ন এলাকায় চেকের হয়রানি এড়ানোর জন্য। এই চেক করার নামে পথে পথে সেসব স্থানের সমাজবিরোধীরা স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করছিল। এ জন্য অনেক শরণার্থী বদরতলায় নৌকা ফেলে হেঁটে সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অনেকে যাচ্ছিল পায়ে হেঁটে, অনেকে যাচ্ছিল গরুর গাড়িতে চড়ে। ক্রমে তারা পারুলিয়া ব্রিজের কাছে এসে পৌঁছায়। পারুলিয়া ব্রিজ সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ রোডে অবস্থিত। এসব শরণার্থী পারুলিয়া ব্রিজের কাছে এসে পৌঁছালেই অতর্কিতে দুই-তিন গাড়ি পাক সৈন্য এসে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। শরণার্থীদের বহর মুহূর্তের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বহু শরণার্থী হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়। দক্ষিণ খুলনা তথা রামপাল, দাকোপ, বটিয়াঘাটার বহু শরণার্থী হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়। দক্ষিণ খুলনা তথা রামপাল, দাকোপ, বটিয়াঘাটার বহু শরণার্থী এখানে মারা পড়ে।
[১২২] শেখ গাউস মিয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত