পার্বতীপুর ইউনিয়নের আড্ডায় গণহত্যা, দিনাজপুর
এরপর রাজাকারদের উদ্যোগে ও সহযোগিতায় পাক দখলদার বাহিনী পার্বতীপুর ইউনিয়নের আড্ডায় মে মাসের প্রথম দিকে একটি হত্যাকাণ্ড চালায়। ঐ হত্যাকাণ্ডে নিম্নবর্ণ ওঁরাও সম্প্রদায়ের ৯ জন লোক নির্মমভাবে জীবন বিসর্জন দেয়। সম্প্রদায়ের বুভুক্ষু একদল লোক দুমুঠো অন্নের জোগাড় করতে আড্ডার মোজাম্মেল হাজীর বাড়িতে ধান-চাল নেয়ার জন্য এসেছিল। ভারতে আশ্রয় নেয়া হাজী সাহেব ওই অসহায় লোকদের তাঁর বাড়ির চাবি দিয়ে বলেছিলেন, ‘যারা আমার বাড়ি হতে ধান-চাল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আনতে পারবে তাদের অর্ধেকটা দেয়া হবে’। পেটে দুমুঠো অন্ন জোগানের তাগিদে তারা জীবন বাজি রেখে মোজাম্মেল হাজীর বাড়িতে এসেছিল। এলাকার রাজাকার ও পুলিশের হাবিলদার (অবঃ) বিষয়টি টের পায় এবং তাদের নেতৃত্বে রাজাকাররা খাদ্যদ্রব্য নেয়ার জন্য আসা লোকদের মোজাম্মেল হাজীর বাড়িটি ঘিরে অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং দ্রুত রহনপুরে পাকবাহিনীকে সংবাদ দেয়। কিছু লোক পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ৯ জন লোক ঘেরাও পড়ে যায়। দখলদার পাকিবাহিনী এসে ধৃত ৯ জনকে বেঁধে রহনপুরে নিয়ে আসে এবং সেনা ছাউনিতে নির্যাতন চালিয়ে আবার আড্ডায় নিয়ে গিয়ে দুরুল ডাক্তারের বাড়ির পাশে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এদের মধ্যে জিতুরাম ও চারোয়া পিতাপুত্রদ্বয় এক সাথে হাত বাঁধা থাকার দরুণ গুলি করার সময় চারোয়ার গুলি লাগেনি। তার ধারণা ছিল পাঞ্জাবিরা চলে গেলে সে বাঁধন খুলে পালিয়ে যাবে। এই মানসে সে লাশের মধ্যে মৃতের মতো পড়ে ছিল, পাকিস্তানপন্থী ও রাজাকাররা যখন নিহতদের মাটিচাপা দিচ্ছিল সে সময়ে চারোয়া অনুরোধ করেছিল, ‘বাবারে আমি মরিনি তোরা আমাকে মাটিচাপা দিস না।’ কিন্তু নির্দয়. শত্রুরা তাকে কোদালের পাশার আঘাতে মেরে নিমর্মভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়।
[৫৮৭] মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত