পার্বতীপুর শহর গণহত্যা, গণকবর ও বধ্যভূমি, দিনাজপুর
পার্বতীপুর শহরের স্টেশন এলাকা, সেতাবগঞ্জ থানা উন্নয়নকেন্দ্র প্রাঙ্গণ, রানীশংকৈল, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, বিরল, কাহারের, খানসামা, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ি, হিলি, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, বীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী এবং বোদাতে রয়েছে গণকবর-বধ্যভূমি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উত্তরবঙ্গীয় অন্যতম প্রধান হত্যা কেন্দ্র ছিল পার্বতীপুর। এখানে বিশ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। এই কেন্দ্রের এলাকা ছিল পাবর্তীপুর হতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী, পার্বতীপুর হতে দিনাজপুরের পঞ্চগড়, পার্বতীপুর হতে রংপুরের লালমনিরহাট ও চিলাহাটি অবধি। উক্ত এলাকাসমূহ থেকে বাঙালি ধরে এনে পার্বতীপুরে একত্রিত করা হতো এবং তারপর রাতে নয়টি বড় রেলের ইঞ্জিনের জ্বলন্ত বয়লারে নিক্ষেপ করা হতো উক্ত হতভাগ্য বাঙালিদের। যেসব স্বাস্থ্যবান বাঙালিকে সশরীরে বয়লারে নিক্ষেপ করা সহজসাধ্য হতো না, সেসব স্বাস্থ্যবান বাঙালিকে হাত কেটে কিংবা শরীরকে কয়েক খণ্ড করে বয়লারে নিক্ষেপ করত। পার্বতীপুর থানাধীন হাওড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী। দখলদার বাহিনীর সৈন্যরা উক্ত চেয়ারম্যানের শরীরের ছয়টি অঙ্গচ্ছেদ করে বলেছিল- ‘এই নাও ছয় দফা অসংখ্য নারীকে নির্যাতনের পর এসব রেল ইঞ্জিনের বয়লারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। খালেকুজ্জামান মুকুল জানিয়েছেন, ‘১৯৭২ সালের গোড়ার দিকে শহরের মাঝখানে পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে কয়েক শ গজ উত্তরে হোম সিগন্যালের কাছে সবচেয়ে বড় গণকবরটি আবিষ্কৃত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকসেনারা পার্বতীপুর থানার গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিদিন স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষকে ধরে এনে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখত।
[১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত