পাটকেলঘাটা গণহত্যা, বাগেরহাট
পাটকেলঘাটা একটা বড় বাজার। খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে কপোতাক্ষ নদীর তীরে এ বাজার অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাজারটির গুরুত্ব খুব বেশি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরু থেকে বাগেরহাট থেকে ব্যাপক হারে শরণার্থীদের ভারত যাওয়া শুরু হয়ে যায়। তারা যেসব স্থানে যাত্রাবিরতি করছিল পাটকেলঘাটা তার মধ্যে অন্যতম। পূর্বেও এই পথ দিয়ে অনেক শরণার্থী ভারতে পার হয়ে গিয়েছিল। এ সময়েও অনেক শরণার্থী ভারত যাওয়ার পথে এখানে অবস্থান করছিল। ২৩ এপ্রিল শুক্রবার, বহু শরণার্থী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সেখানে। কেউ কেউ নৌকায়, কেউ তীরের বাজারে। সকলের মুখেই গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ। সব ফেলে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়িয়ে কারো মনেই শান্তি নেই। তারপর পথের বিপদ তো আছেই হঠাৎ একদল পাকসেনা যমদূতের মতো হাজির হয় সেখানে। তারা আসে সাতক্ষীরার দিক থেকে। হানাদারেরা এসে সমস্ত বাজার ঘিরে ফেলে এবং নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। এর মধ্যেই অনেক শরণার্থী ধরা পড়ে যায়। তাদের ধরে এনে সর্বস্ব লুটপাট করে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হতে থাকে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পড়ে বাগেরহাটের বহু মানুষ মারা যায়। শতাধিক লোককে এখানে ঐ দিন হত্যা করা হয়। কাউকে হত্যা করা হয় গুলি করে, কাউকে মারা হয় নৃশংসভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে। শুধু শরণার্থীরা নয়, ঐ দিন বাজারের প্রায় সব দোকানই লুটপাট হয়ে যায়।
[১২২] শেখ গাউস মিয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত