You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.07 | পাঁচগাঁও গণহত্যা ও গণকবর | মৌলভীবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

পাঁচগাঁও গণহত্যা ও গণকবর, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে পাকবাহিনী প্রবেশ করে ১৯৭১ সালের ৭ মে। তবে ১ মে থেকেই রাজনগর উপজেলায় পাকসেনারা বিভিন্ন গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ উপজেলার পঞ্চেশ্বর গ্রামে পাকবাহিনীর সদস্যরা
নগেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস ও তাঁর ভাতিজা মণি বিশ্বাসকে হত্যা করে। ঐদিনই তারা মুন্সিবাজারে লুটপাট চালায় এবং গ্রামে প্রবেশ করে সনঠাকুর, ছায়া শীল, খোকা দেব, মুকুল দাস ও ডা. বনমালী দাসকে হত্যা করে। কিন্তু নির্মমতার চূড়ান্ত অনুশীলন করে পাঁচগাঁও গ্রামে। এ গ্রামটি ছিল মূলত হিন্দুপ্রধান। গ্রামবাসীর মধ্যে আগে থেকেই একটা আতঙ্ক ছিল, যে কোনো সময় পাকসেনারা তাদের এ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমে গ্রামে প্রবেশ করবে এবং তাদের হত্যা করবে। বাঁচার তাগিদে গ্রামবাসী সেদিন পাকহানাদার বাহিনী এলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে, সে জন্য সবাইকে বলা হয়েছিল মন্দিরের ঘণ্টা বাজানো হলে ধরে নিতে হবে শত্রু গ্রামে ঢুকেছে। কিন্তু ৭ মে যখন শত্রুরা গ্রামে আসে, ঘণ্টা বাজানোর আর সুযোগ হয়নি। পাক সেনাবাহিনীর প্রায় ৫০ জনের একটি দল ৭ মে, দুটি ট্রাকে করে পাঁচগাঁওয়ে প্রবেশ করে, তখন গ্রামবাসী ঘুমে অচেতন। তাঁরা গ্রামের পথঘাট চেনে না, দালালেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুমন্ত লোকজনকে জাগিয়ে তোলে। আটক লোকগুলোকে পাকসেনারা গ্রামের একটি দিঘির পাড়ে এনে তাদের হাত-পা বেঁধে এক জায়গায় জড়ো করে। গ্রামের ঘরে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এক সময় জড়ো করা গ্রামবাসীর শরীর থেকে কাপড় খুলে একজনের গলার সঙ্গে অন্যজনের পা বেঁধে জোড়ায় জোড়ায় দিঘির জলে নিক্ষেপ করে। এরপর পানির মধ্যে হাবুডুবু খাওয়া লোকদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করে ব্রাশফায়ার নিরীহ গ্রামবাসীর রক্তে লাল হয়ে ওঠে দিঘির জল। হাত-পা বাঁধা ৫৯ জন গ্রামবাসী সেদিন এখানে শহীদ হয়। মানুষগুলোর মৃত্যু নিশ্চিত হলে জল্লাদেরা এখান থেকে চলে যায়। দিঘির জলে কুচুরিপানার মত ভেসে উঠেছিল মানুষের লাশ আর লাশ। পাকসেনারা চলে যাবার পর গ্রামবাসী ছুটে এসে স্বজনদের লাশ দিঘি থেকে তুলে এনে দিঘির পশ্চিম পাড়ে একটি গণকবরে সবাইকে মাটি চাপা দেয়। গ্রামের মানুষ হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও পাকসেনাদের ভয়ে সেদিন একটি লাশেরও দাহ করা সম্ভব হয়নি।
পাঁচগাঁওয়ের হত্যাযজ্ঞে সেদিন যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন বসন্ত নমঃশূদ্র, উমেশ নমঃশূদ্র, সুনাতন নমঃশূদ্র, নগরী শব্দকর, গোপাল শব্দকর, অভি শব্দকর, রমণ শব্দকর, মিরদ শব্দকর, মশাই শব্দকর, ইরেশ শব্দকর, ব্রজেন্দ্র শব্দকর, সার শব্দকর, নিত্যবালা শব্দকর, নরেশ শব্দকর, পুতুল অধিকারী, ইরেশ মালাকার, উমেশ মালাকার, আদাই মালাকার, টনা মালাকার, পুতুল মালাকার, সুরিন্দ্র মালাকার, সুবল মালাকার, বিমল মালাকার, বাদল মালাকার, নগেন্দ্র মালাকার, গোপেশ কুমার মালাকার, বন্ধু মালাকার, উপেন্দ্র মালাকার প্রমুখ।
[৩৪] দিলরুবা বেগম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত