You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.16 | পটিয়ায় গণহত্যা | চট্টগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

পটিয়ায় গণহত্যা, চট্টগ্রাম

১৬ এপ্রিল ১৯৭১, শুক্রবার সকাল দশটায় ও দুপুর দুটোয় পাকবাহিনী বোমারু বিমান থেকে পটিয়ার ওপর হামলা চালায়। এতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। পটিয়ায় এসে পাকবাহিনী স্থানীয় কলেজে ঘাঁটি স্থাপন করে। পটিয়ায় আসার সময় তারা ব্যাপক গণহত্যা চালায়। মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরাও এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাদ যাননি। পাকবাহিনীর হাতে নিহতদের মধ্যে ছিলেন সেনের হাটের সমাজসেবী ফয়জুল হক, পুস্তক ব্যবসায়ী শামসু, মনসা গ্রামের হামিদুল, চরকানাই হাইস্কুলের শিক্ষক সুমতি বড়ুয়া। কলেজে স্থাপিত ঘাঁটিতে সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় তিন-চারশ। এদের দলনেতা ছিল মেজর আসলাম। এছাড়া মেজর হাদির নেতৃত্বে আরেকটি দল পিটিআইতে ঘাঁটি স্থাপন করে। মে মাসের শেষের দিকে দোহাজারী পরিদর্শনে আসে পাকবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পটিয়া জামিজুরি গ্রাম, মুজাফফরাবাদ গ্রাম, হাইদগাঁওয়ের পণ্ডিত বাড়ি (আশকার বাড়ি), কেলিশহর, ডনহরা, ভট্টাচার্য বাড়ি, পালপাড়া, গৈড়লা গ্রামে পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
২৬ এপ্রিল জামিজুড়ি গ্রামে হামলা করে পাকবাহিনী ডাক্তার করুণা কুমার চৌধুরী (৭০), শিক্ষক প্রফুল্ল ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্যসহ এই বাড়ির মোট ১৭ ব্যক্তিকে হত্যা করে। ৩ মে মুজাফফরাবাদে হামলা করে তারা স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক রামমোহন বিশ্বাস, বিশিষ্ট সমাজকর্মী মনমোহন চৌধুরী ও কিরণ রায় চৌধুরীসহ তিনশ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।
১১ ডিসেম্বর, গাছবাড়িয়া পালপাড়া গ্রামে পাকবাহিনী এসে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। ১৭ জনকে হত্যার পর শিক্ষক ক্ষেত্রমোহন নাথের স্ত্রী আলো রানীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে আলো রানী কোনোমতে তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে অদূরবর্তী জ্বলন্ত ঘরবাড়ির মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পটিয়ার ধলঘাট গৈড়লা গ্রামে নভেম্বরে এক নিধনযজ্ঞ সংঘটিত হয়। ধনঞ্জয় ঘোষ, মধু ঘোষ, মুকুন্দ ভট্টাচার্যসহ অনেকে সেদিন শহীদ হন।
পটিয়ার শহীদদের মধ্যে রয়েছেন কেলিশহরের রণীন্দ্র লাল, বৈলতলির প্রফুল্লরঞ্জন, বরজার মিলনকান্তি দাস ও খোকন দাস, জিরি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, হাইদগাঁও-এর হরেন্দ্রলাল নজী, গৈড়লার সুনির্মল ঘোষ, কেলিশহরের আলমকান্তি গুহ, শোভনদন্তীর আমিনুল হক, তিয়ারকুলের জিতেনলাল পাল প্রমুখ।
[৩৪] ডা. এম.এ. হাসান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত