You dont have javascript enabled! Please enable it!

নসুখানের ইটভাটা গণহত্যা, খুলনা

খুলনা মহানগরের খানজাহান আলী থানার অন্তর্গত মীরের ডাঙ্গা গ্রামে আর.আর.এফ হেডকোয়ার্টারের পশ্চিম পাশে যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন স্থানে নসুখানের ইটভাটা অবস্থিত। পাকিস্তান আমলেও এখানে এটির অবস্থান ছিল। ১৯৭১ সালের ২৯ মে এখানে সংঘটিত হয় এক মর্মান্তিক গণহত্যা।
১৯৭১ সালের এপ্রিলে খুলনার বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু হলে হাজার হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা মাতৃভূমি ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে। দিঘলিয়ার হিন্দু অধ্যুষিত দেয়াড়া গ্রামের বাসিন্দারাও ভারতে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভারতে যাওয়ার পথ-ঘাট এদের জানা ছিল না। তাই তারা এখানে বসবাসরত মুকরাম মেট নামক একজন হিন্দু বিহারির সাথে প্রচুর টাকার বিনিময়ে ভারতে পৌঁছে দেবার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। মুকরাম মেট ছিল ভারতীয়। সে দেয়াড়া গ্রামে অবস্তিত রশিদ ব্রাদার্স নামক একটি পাট কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে দর্ঘিদিন যাবৎ এ এলাকায় বসাবাস করে। ফলে বাঙালি হিন্দুদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ভারত গমনেচ্ছু স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যগণ বিশ্বাস করে তার সকল প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয় এবং সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট দিনেও নির্দিষ্ট সময়ে দশটি পরিবারে সদস্যরা দৌলতপুরের মহসিন মোড়ে এসে পৌঁছায়। কিন্তু মুকরাম মেট বিশ্বাসঘাতকতা করে দৌলতপুরের কুখ্যাত বিহারি ইলিয়াস খানের পুত্র ইসমাইল খানের মাধ্যমে দৌলতপুরে অবস্থানরত পাকসেনাদের হাতে এদের ধরিয়ে দেয়। অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে জনৈক পরিতোষসহ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অন্যরা পাকসেনদের হাতে বন্দি হয়। এদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ সংখ্যালঘু ব্যক্তির নাম জানা গেলেও ধৃত মহিলাদের সম্বন্ধে কিছু জানা যায়নি। ধৃত ব্যক্তিদের প্রথমে দৌলতপুরে অবস্থিত আবুল কাসেমের গোডাউনে নিয়ে যায়। রাতে পুরুষ ১৪ জনকে উপর্যুক্ত নসুখানের ইটভাটায় নিয়ে হত্যা করা হয় এবং নারীদের গোডাউনের ভেতর রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। বিষয়টি দিঘলিয়ায় জানাজানি হয়ে গেলে সেখানকার কতিপয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি দৌলতপুর থানা পিস কমিটির সভাপতি আকবর আলী বিশ্বাসের সহযোগিতায় বন্দিদের মুক্ত করে আনতে সক্ষম হয়। অবশ্য দয়াল ও কালীপদ নামক দুই ব্যক্তির স্ত্রীদ্বয়কে একদিন পর ছাড়া হয়। পরে সকলকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!