You dont have javascript enabled! Please enable it! নলদিঘী গণহত্যা | ঠাকুরগাঁও - সংগ্রামের নোটবুক

নলদিঘী গণহত্যা, ঠাকুরগাঁও

সীমান্তবর্তী রানীশংকৈল থানাটি মূলত কোনো যুদ্ধক্ষেত্র না হয়েও স্থানীয়-অস্থানীয় (মালদাইয়া) দ্বন্দ্বের কারণে এখানে খানসেনা ও তাদের দোসরদের হাতে অগণিত সাধারণ বাঙালি শহীদ হয়েছেন এবং এখানে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অমানবিক কাজ সংঘটিত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন, পাশবিক অত্যাচারের ঘটনা রানীশংকৈল থানায়ই বেশি।
রানীশংকৈল থানার দ্বিতীয় বধ্যভূমি ‘নলদিঘী’। থানা ডাকবাংলো থেকে হরিপুর রোডে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে পাকা রাস্তাসংলগ্ন ৯ একর জমি নিয়ে পুকুরটি অবস্থিত। এখানে শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হাত-পা বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কখনো বা হাত-পা বেঁধে গুলি করা হয়েছে, আবার কখনো বা রামদা দিয়ে কুপিয়ে বলির পাঁঠার মতো হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি নরপশুর দল এখানে নারী ধর্ষণের মতো অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে অনেক।৮ নম্বর নান্দুয়ার ইউনিয়নের বলিদাড়া গ্রামের জনৈক হিন্দু কৃষকের সদ্য বিবাহিত কন্যা টেপরী ওরফে সান্ত্বনাকে নিয়ে পরিবারের সবাই যখন প্রাণভয়ে সীমান্তবর্তী ভারতের দিকে যাচ্ছিল তখন স্থানীয় রাজাকার কানা মজিবর ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী জোরপূর্বক টেপরীকে ধরে নিয়ে আসে। তাকে প্রথমে ৩ নম্বর সোসেনগাঁও ইউনিয়ন কাউন্সিল ক্যাম্পে এবং পরে থানার ভেতরে নিয়ে রাখা হয়। এখানে তিনমাস আটকে তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়। তিন মাস পর প্রায় পাগল হয়ে পড়ে টেপরী। শেষ পর্যন্ত অচল ও অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ক্যাম্পের বাইরে এনে ফেলে দেয়া হয়। টেপরীর গর্ভের সন্তানের বয়স এখন ২৯ বছর। পিতামাতার কাছ থেকে টেপরীকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে আসার কারণে কন্যাকে রেখে তারা আর ভারতে যাননি। সীমান্তবর্তী নয়ানপুর গ্রামের চৈতু মোহাম্মদ নামক বন্ধুর বাড়িতেই তারা শেষদিন পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।
টেপরী ছাড়াও বলিদাড়া গ্রামের ‘আছিয়া’, বাছোর ইউনিয়নের দোসিয়া গ্রামের ‘বুদ্ধি’ এখনো সমাজে অবাঞ্ছিতা হয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন।
[৯৫] মোহাম্মদ এমদাদুল হক

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত