You dont have javascript enabled! Please enable it!

নারী নির্যাতন ফরিদপুর, ফরিদপুর

ফরিদপুর ৮ মাস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দখলে ছিল। এ সময়ে নারীরা হয়েছেন চরম নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার। এপ্রিলে ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসনের মধ্যবর্তী বৈদ্যডাঙ্গী, ভাঙ্গীডাঙ্গীতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন অর্ধমত নারী। নগরকান্দার কোদালিয়াতে অনুরূপভাবে নিহত হয়েছেন ১৮ জন নারী। সেই সঙ্গে তাদের কোলের শিশু।
ফরিদপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতির স্ত্রী, তাদের দুই কন্যা পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান। বৃদ্ধ মা ও বড় মেয়ে বুলেটের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন।
সদরপুর পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের ছাহের ব্যাপারীর কন্যা আছিয়া বেগমকে (২৪) পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। পাকসেনাদের কুঠুরিতে আছিয়ার মৃত্যু হয়। মধুখালী থানার পরীক্ষিতপুর গ্রামের নন্দ খাঁর স্ত্রীকেও সেনাক্যাম্পে বলি হতে হয়। এপ্রিল মে-জুন পর্যন্ত পাকসেনারা ফরিদপুর-কামারখালী রাস্তার পাশে ভ্যান থামিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ত। এ কমাসে কয়েকশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। পাকিস্তানপন্থী জনৈক ব্যক্তি সাহস করে মধুখাল সেনাক্যাম্পে পাকিস্তানি সামরিক অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করলে বলা হয়, এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। সৈন্যরা বাইরে গেলে তাদের মতো করে চলে। ফরিদপুরে পাকিস্তানি সমর্থক প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়িতে একজন গর্ভবতী মহিলা ও অপর এক কিশোরীও ধর্ষণের শিকার হয় বলে ঐ পরিবারের একজন সদস্যের কাছ থেকে জানা যায়। মধুখালীতে পাকসেনাদের নারী সরবরাহকারীর স্ত্রী পাকসেনাদের হাতে ধর্ষিত হলে নারী সরবরাহকারী রাজাকারটি পাগল হয়ে যায়। খরসুতী গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র বসুর কিশোরী কন্যা কল্পনা বসু রাজাকার কোটন কর্তৃক অপহৃত হয় এবং দীর্ঘদিন তাকে কোটনের আস্তানায় বন্দি থাকতে হয়।
এছাড়া নারী নির্যাতনের একটি অভিনব তথ্য জানা গেছে। জোরপূর্বক নারীদের ধরে এনে পাকসেনা কর্মকর্তা মৌলভী ডেকে অস্ত্রের মুখে কবুল বলিয়ে নিত। তারপর বলত, তুমি আমার হালাল বিবি। তোমার ওপর আমার হক রয়েছে। এভাবে ধর্মের নামে ফতোয়া দিয়ে নির্যাতন চালাত। ‘মুতা বিবাহ’-এর দোহাই পেড়ে এমনিভাবে সংঘটিত কিছু ঘটনার কথা জানা যায়।
বিদ্যমান সামাজিক মূল্যবোধই নারী নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে আছে। নারীদের সঙ্গে শিশুরাও হয়েছে নির্যাতনের শিকার। পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর বৈদ্যডাঙ্গী-ভাঙ্গীডাঙ্গীতে প্রতিবেশীরা দেখতে পেল দুগ্ধপোষ্য শিশু অধীর তার নিহত মা কানন বালার বুকের দুধ পান করছে। এমনি অনেক শিশু ঘাতকের বুলেটে মাতৃহারা-পিতৃহারা হয়েছে। কোদালিয়াতে মায়েদের সঙ্গে ঝাঁঝরা হয়েছে কতিপয় কচি শিশুর বুক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা কেবল শিশুদের প্রাণই কাড়েনি অনেককেই পঙ্গু, বধির, বোবায় পরিণত হয়েছে।
[১৫] আবু সাঈদ খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!