নিউজপ্রিন্ট মিল বধ্যভূমি, খুলনা
খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত নিউজপ্রিন্ট মিল পাকসেনা ও বিহারিদের আর একটি বধ্যভূমি। ২৮ মার্চের মধ্যে এ মিলের সিংহভাগ শ্রমিক-কর্মচারী খুলনা শহর ত্যাগ করে চলে যায়। খুলনা বেতারে শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার খবর প্রচারের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকলকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানালে অন্যান্য মিলের ন্যায় এ মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরাও পর্যায়ক্রমে আসতে শুরু করে। এদের ধরার জন্য ঘাতকরা মিলের বিভিন্ন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকে এবং কর্মস্থলে যোগ দিতে আসা সরলমনা শ্রমিকদের ধরে ধরে ঘাতকরা এখানে হত্যা করে। এ মরণফাঁদে নিউজপ্রিন্ট মিলের শ্রমিকরাই বেশি পড়ে। এখানে একদিনেই শখানেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে আসে। ঘাতকরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের সকলকে ধরে নিয়ে হত্যা করে ভৈরব নদীতে ফেলে দেয়। নিউজপ্রিন্ট মিলের এ হত্যাযজ্ঞে পাশে অবস্থিত পাকিস্তান নৌঘাঁটি তিতুমীরের নৌবাহিনীর সদস্যরা জড়িত ছিল। নিহত শ্রমিকদের লাশ ভৈরব নদী বয়ে নিয়ে যায়। ভৈরব নদীর দক্ষিণে প্রবাহিত রূপসা নদীর দুই ধারে অবস্থানরত বিভিন্ন মানুষ নদীতে ভাসান লাশগুলোর মাঝে নিজেদের স্বজনদের খুঁজতে থাকে এবং তা পাওয়া মাত্র তুলে নিয়ে নদীর তীরে কবর দেয়। অনেকে যথারীতি অপেক্ষায় থাকে তাদের কারো লাশ ভেসে আসে কিনা তা পাবার আশায়। নিউজপ্রিন্ট মিলের কলোনিতে একটি গণকবরও আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এ মিলের পাশে নৌবাহিনীর ঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর থাকা সত্ত্বেও এ মিলে পাকবাহিনীর একটি ঘাঁটিও স্থাপন করা হয়। ফলে ঘাতকদের জন্য এ মিলটি সবচয়ে নিরাপদ।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত