You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.25 | ধলপুর ডিপো গণকবর | ঢাকা - সংগ্রামের নোটবুক

ধলপুর ডিপো গণকবর, ঢাকা

ঢাকার ধলপুর ডিপো এলাকায় ছিল গণকবর। ধলপুর ময়লা ডিপো নামে পরিচিত স্থানটিতে বিশাল বিশাল গর্তে হাজার হাজার মানুষকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। ২৫-২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে সমগ্র ঢাকা শহরকে লাশের শহরে পরিণত করেছিল। চারদিকে কেবল লাশ আর লাশ। এসব লাশ সরিয়ে নেবার ভার পড়েছিল ঢাকা পৌরসভার ওপর। এ সময়ে ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিল মেজর সালামত আলি খানশূর। মেজর সালামত পৌরসভার সকল সুইপার ইনসপেক্টরকে ডেকে ঢাকা শহরের সব লাশ অতি দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ অনুযায়ী ইনসপেক্টর মোহাম্মদ সাহেব আলী, আলাউদ্দিন, কালীচরণ, আওলাদ হোসেন এবং পাঞ্চাম ১৮ জন ডোমকে তিনটি দলে বিভক্ত করে ঢাকা শহরের লাশ তুলতে বেরিয়ে পড়ে। মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশঘরে জমা করা হয়েছিল শত শত লাশ। এসব লাশ ধলপুর ডিপোতে ফেলে মাটিচাপা দেয়া হয়। ঢাকা পৌরসভার পরদেশী ডোম এ বিষয়ে বলেছে:
মিটফোর্ডের লাশঘরের সকল লাশ ট্রাকে উঠিয়ে আমরা ধলপুরের ময়লা ডিপোতে নিয়ে গিয়ে বিরাট গর্তের মধ্যে ঢেলে দিলাম। দেখলাম বিরাট বিরাট গর্তের মধ্যে সুইপার ও ডোমেরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা লাশ ট্রাক থেকে গর্তের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমি অধিকাংশ লাশের দেহে কোনো কাপড় দেখি নাই। যে সমস্ত যুবতী মেয়ে ও রমণী লাশ গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো তার কোনো লাশের দেহেই আমি কোনো আবরণ দেখি নাই।
এ বিষয়ে চুনু ডোম বলেছে:
২৯ মার্চ আমাদের ট্রাক ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রবেশপথে যায়। আমরা পাঁচজন ডোম হাসপাতালের প্রবেশপথে একটি বাঙালি যুবকের পচা, ফুলা, বিকৃত লাশ দেখতে পেলাম। লাশ গলে যাওয়ায় লোহার কাঁটার সাথে গেঁথে লাশ ট্রাকে তুলেছি। … এরপর আমরা লাশঘরে প্রবেশ করে বহু যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ- কিশোর ও শিশুর স্তূপীকৃত লাশ দেখলাম। আমি এবং বদলু ডোম লাশঘর থেকে লাশের পা ধরে টেনে ট্রাকের সামনে জমা করেছি। আর গণেশ, রঞ্জিত (লাল বাহাদুর) এবং কানাই লোহার কাঁটা দিয়ে বিধিয়ে পচা গলিত লাশ ট্রাকে তুলেছে। প্রতিটি লাশ নিয়ে ধলপুর ময়লার ডিপোতে ফেলেছি। চুনু আরো বলেছে, ২৮ মার্চ শাঁখারীবাজার থেকে প্রতিবারে একশত লাশ উঠিয়ে তৃতীয়বার ট্রাক বোঝাই করে তিনশত লাশ ধলপুর ময়লার ডিপোতে ফেলেছি। স্বামীবাগ আউটফল ডিপো এলাকাতেও বহু লাশ ফেলে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল।
[ ১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত