You dont have javascript enabled! Please enable it!

নগরীপাড়া গণহত্যা, কুমিল্লা

‘৭১-এর নভেম্বর মাসে লাকসাম থানার মুদাফফরগঞ্জের নগরীপাড়ার কর্মকার বাড়ির পেয়ারী মোহনের মেয়ে চতুদর্শী সুন্দরী আরতী বালার ওপর চোখ পড়ে কয়েকজন রাজাকারের। একদিন আরতীকে অপহরণ করার জন্য রাজাকার ও পাকসেনারা এ বাড়িতে হামলা করে এবং পুরুষদের ওপর অত্যাচার করে। সেদিন কিছু টাকার বিনিময়ে তারা রক্ষা পান। এর কদিন পর ২৮ নভেম্বর রাত ১১টায় তিন রাজাকারের নেতৃত্বে ৬-৭ জন রাজাকার ও এক পাকসেনা কর্মকার বাড়িতে ঢুকে ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে।
গুলির আওয়াজ শুনে উমেশ চন্দ্র কর্মকারের স্ত্রী ঊষা রানী ঘরের দরজা একটু ফাঁক করে দেখেন যে, কালো পোশাক পরা কয়েকজন লোক উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। ঊষা রানী স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বর্বর রাজাকাররা ঘরের দরজা ভেঙে উমেশ চন্দ্রকে বের করে উঠানে নিয়ে আসে। এ সময় অন্যান্য ঘর থেকে উমেশ চন্দ্রের পিতাকে বের করে রাইফেলের বাঁট দিয়ে প্রহার করতে থাকে। ইতিমধ্যে রাজাকারদের কয়েকজন বাড়ির মহিলাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে এবং আরতী বালাকে ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ পরিবারের পুরুষদের রাজাকাররা ৫০০ গজ দূরে একটি বটগাছের কাছে হাত বেঁধে লাইনে দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করে।
পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন সেখানে গিয়ে মরদেহগুলোর মধ্যে ভুবন চন্দ্র কর্মকারকে তখনও জীবিত অবস্থায় দেখতে পান। ভুবন চন্দ্র তার ৮-৯ বছরের ছেলে মানিককে পানি খাওয়ানোর জন্য বলে। ছেলেটি পানি আনতে বাড়িতে গেলেও পানি নিয়ে ফিরতে পারেনি। মৃতদেহগুলোর সামনে লোকজনের জমায়েত দেখে পার্শ্ববর্তী পুলের ওপর থেকে পাকসেনারা গুলি করে। ছেলেটি পানি নিয়ে আসার আর সুযোগ পায়নি। নরপশুরা রাস্তার ওপরেই গর্ত করে মৃতদেহগুলো এবং জীবিত অবস্থায় ভুবন চন্দ্রকে মাটিচাপা দেয়। এ সময় ভুবন মাটিচাপাদাতার নাম ধরে তাকে মাটিচাপা না দেয়ার অনুরোধ করলে বর্বর নরপশুরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি।
২৮ নভেম্বর আরতী বালার জন্যই কর্মকার বাড়িতে নেমে আসে বিভীষিকাময় রাত। তার অপরাধ সে সুন্দরী ছিল। পুরুষদের ধরে নেয়ার সময় আরতীকে মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যায় রাজাকাররা। রাতভর তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতনের স্টিম রোলার। বর্বর পশুরা তার ওপর নির্যাতন চালানোর পর রাত তিনটায় তাকে ছেড়ে দেয় এবং বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলে। আরতী তখন তার বাবা ও কাকাদের যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে যেতে চায়। একথা শুনে বর্বররা তাকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারতে মারতে বাড়ি যাওয়ার জন্য বলে। সে বাধ্য হয়ে শেষরাতে বাড়ি ফিরে আসে।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!