You dont have javascript enabled! Please enable it!

নজরগঞ্জ গণহত্যা ও গণকবর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

কেরানীগঞ্জের একটি গ্রাম নজরগঞ্জ। সেদিন ছিল ২ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। ভোর ছয়টায় কামান আর মর্টারের প্রচণ্ড শব্দে গ্রামবাসীর ঘুম ভেঙে যায়। সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে। পাকবাহিনী গ্রামের চারদিক ঘিরে ফেলেছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ গ্রামেরই বাসিন্দা এরশাদুল হক তিনি এক সাক্ষৎকারে সেদিনের গণহত্যা সম্পর্কে বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে দুদিক থেকে বাড়িতে ঢোকে তারা। দরজায় টাঙানো আল্লাহ, মোহাম্মদ লেখা ক্যালেন্ডারের তোয়াক্কা করেনি। প্রথমে তারা তিন ভাই আফজালুল হক (৩০), ফায়েজুল হক (২৫), এরফানুল হক (৪২), চাচাতো ভাই ওবায়দুল হক এবং একজন অতিথিসহ প্রত্যেককে চেয়ারে বসিয়ে গুলি করে। দুজনের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়। বাকিদের ঘণ্টাখানেক পরে মৃত্যু হয়। এরশাদুল হক তখন পাশেরই এক ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু মিলিটারি সেদিকে আর যায়নি বলে সেদিন তিনি বেঁচে যান।
সে সময় বহু লোক ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে আসে। কিন্তু তাদের অনেককেই তখন পাকবাহিনী হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সেদিন যেসব গ্রামে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়, নজরগঞ্জ, মান্দাইল, মধু ব্যাপারীর ঢাল, কালিন্দী, আমিরাবাগ, বুশিয়ারবাগ, মেঘুলবাগ, বন্ধ, মান্দাইল, গকুলচর, গোলজারবাগ, কাঁটাগাও, জিঞ্জিরা, অমৃতনুর, ডাকনাড়া, সুভা প্রভৃতি। তিনি আরও জানান এসব এলাকা মিলে পাকসেনারা প্রায় হাজার খানেক মানুষ হত্যা করে। অনেকেরই লাশের দাফন ঢাকায় নিয়ে করা হয়— ১৬ জনকে একত্রে গণকবর দেয়া হয় এ নজরগঞ্জ কবরস্থানে। তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায় আফজালুল হক, ফায়েজুল হক, এরফানুল হক, ওবায়দুল হক, আমির হোসেন, মনির হোসেন, রহমত উল্লাহ, কালু, কেরামতের মা, গেদির বাপ, বেঞ্জু, আবেদ ও তার ভাগ্নে প্রমুখ।
[৩৪] দিলরুবা বেগম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!