ধরমপাশা গণহত্যা, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলার পশ্চিম-উত্তর প্রান্তে ধরমপাশা উপজেলা। সুনামগঞ্জ সদরের সাথে দূরত্ব প্রায় ৫০ মাইল। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে মাত্র তিন মাইল দূরত্বে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা সদর ও রেল স্টেশন। ২২ মাইল উত্তরে গারো ও খাসিয়া পাহাড়ের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মহেশখলা।
২৫ মার্চের বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের পর ধরমপাশা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, আটপাড়া, মদন, নেত্রকোনা প্রভৃতি এলাকার হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে মহেশখলায় আশ্রয় নেয়। সেখানকার ই.পি.আর বাহিনী এবং মধুপুরের গড় থেকে আগত সেনাবাহিনীর লোকজনও মহেশখলায় জমায়েত হন। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু লোক যৎসামান্য উচ্ছিষ্টভোগের হীন মানসিকতা থেকে পাকহানাদার বাহিনীর দালালি করতে শুরু করে। এদের কাঁধে ভর করেই পাক বাহিনী আসে ধরমপাশায়।
১৯৭১ সালের ৩ মে। পাকসেনারা প্রবেশ করে ধরমপাশায়। অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হেকিম এম.পি.এর বাড়ি। এরপর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই এলাকায় পাকবাহিনী কর্তৃক হত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট থেকে শুরু করে হেন কুকাজ বা অপরাধ নেই, যা সংঘটিত হয়নি। ২ ডিসেম্বর ধরমপাশার যুদ্ধে শহীদ হন মোফাজ্জল।
১৪ জুন মুক্তিবাহিনীর সাথে এক যুদ্ধে ধরমপাশা গ্রামে নিহত হয় একজন মেজরসহ ২০ জন পাকসেনা। এই ঘটনার প্রতিশোধ গ্রহণ করে তারা হত্যা ও নির্যাতনের ভেতর দিয়ে। প্রথমেই তারা ধরমপাশা বাজার সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেয়। একটি ঘরও বাজারে অবশিষ্ট ছিল না। ধরে ধরে তারা হত্যা করে ধরমপাশা গ্রামের শামসুদ্দিন তালুকদার, জাফর আলী, গোবর্ধন, শামসুল হক তালুকদার ও দনাইকে এবং দশঘরি গ্রামের গিয়াসউদ্দিনকে। আক্রমণ চালায় কামলাবাজার গ্রামে। সেখানে হত্যা করে তারা আছিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজনকে। ওইদিন পাক হায়েনাদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১০ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলাকে। আর ইজ্জত দিতে হয়েছে অসংখ্য মা-বোনকে। এসব হত্যা এবং নারী ধর্ষণের মতো পাশবিক কাজে সহায়তা করেছে মজিদ মিয়া ও গিয়াস উদ্দিন নামের পাকবাহিনীর এ দেশীয় দোসরবৃন্দ। ছাতক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হায়েনাদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন নাম না জানা আরো ২০ জন।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত