You dont have javascript enabled! Please enable it!

নগরকান্দা হত্যাকাণ্ড ও গণকবর, ফরিদপুর

চাঁদহাট যুদ্ধের পর পাকসেনারা ফরিদপুরের নগরকান্দায় হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাটে মেতে ওঠে। ৩০, ৩১ মে ও ১ এপ্রিল চলে তাদের নারকীয় তাণ্ডব।
মুকসুদপুর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, কাশিয়ানী চতুর্দিক হতে শত শত পাকসেনা গুলি করতে করতে এলাকায় প্রবেশ করে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। যাকে সামনে দেখে তাকেই গুলি করে। হেলিকপ্টার থেকে সেলিং করা হয়। পূর্বাহ্নে এলাকাবাসী অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। নগরকান্দা, ঈশ্বরদীতে গুলি করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ওরা।
পাকসেনারা নগরকান্দা, বল্লবদী, চাঁদহাট, রথকেলা ও গোপালকরদী গ্রামে ক্যাম্প করে রাত্রি যাপন করে।
দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে শুরু হলো আবার হত্যাযজ্ঞ। আরো পাকসেনা এসে যোগ দিল। ভাঙ্গা হয়ে আগত দলটি ভাঙ্গা থানার চণ্ডীদাসদী গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। ঐ গ্রামে কমপক্ষে ২০ জন লোককে হত্যা করে।
পাকসেনারা আটকাহনীয়া, বনগ্রাম, গোয়ালদী, মেহেরদিয়া, পুড়াপাড়া, ঘুনাপাড়া, দফা, মেহরদিয়া, সোনাতুন্দি চাঁদহাটসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করে। সেনারা ছিল উত্তেজিত ও বেপরোয়া। যাকে সামনে পায় তাকেই গুলি করে। নিহতের সংখ্যা অর্ধশত। ঐ গ্রামে তাদের পথপ্রদর্শক রাজাকাররা ব্যাপক লুটপাট করে। ঐ দিনও আকাশে হেলিকপ্টার পাহারা দিচ্ছিল এবং যথেচ্ছ গুলিবর্ষণ করছিল। ঐদিনও দুপুর পর্যন্ত তারা তাণ্ডবনৃত্য চালাল।
তৃতীয় দিনে বাগাট, পোড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, চুড়িয়ার চর প্রভৃতি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অসুস্থ লোকেরাই বাধ্য হয়ে গ্রামে ছিল। কেউ কেউ বৃদ্ধ বাবা-মাকে রেখে এলাকা ত্যাগ করেনি। কিছু কিছু লোক ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে ছিল। কেউ রেহাই পেল না। খুঁজে খুঁজে গুলি করা হলো। নিহত হলো অনেক। একই সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালাল।
পাকিস্তানপন্থী বলে যারা পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে বাড়িতে ছিল তাদেরও ক্ষমা করা হয় না। এ প্রসঙ্গে রঘুরদিয়া গ্রামের ঘটনা উল্লেখ করা যায়, এই গ্রামে চান্দ খন্দকার ও লাল খন্দকার নামে দুই ভাই ছিল, চান্দ খোন্দকারের এক ছেলে পশ্চিম পাকিস্তানে তখন মিলিটারিতে চাকরি করত। সেই ছেলের একটি ফটো বাড়ির সামনে টাঙিয়ে ডাব-নারিকেল ও কয়েকখানা চেয়ার রেখে খানসেনাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে। দুই ভাই মাথায় টুপি দিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তাদের ধারণা ছিল এসব করলে খানসেনারা তাদের কিছু করবে না। কিন্তু ঘটল বিপরীত। পাক মিলিটারি এসেই প্রথমে তাদের দুই ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তিন দিনে তারা নগরকান্দায় দুই শতাধিক লোক হত্যা করে। আর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং সেই সঙ্গে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু।
নগরকান্দায় কোদারিয়াতে শহীদদের দুটি গণকবর রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামে শহীদদের বিচ্ছিন্নভাবে পুঁতে রাখা হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!