দিরাই ও পেরুয়া গণহত্যা, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলার যে বিশাল এলাকাকে ভাটি বাংলা বলে অভিহিত করা হয় সেই অঞ্চলেই দিরাই উপজেলা। ১৫ ডিসেম্বর একদল মিলিশিয়া ও রাজাকার মিলে আক্রমণ করে পেরুয়া গ্রাম। খুঁজে বের করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুকলাল কায়স্থকে। তাঁর ওপর চালায় শারীরিক নির্যাতন। একটি একটি করে উপড়ে ফেলে তাঁর চোখ। প্রহারে প্রহারে জর্জরিত করে তাকে। আর ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি বলতে থাকেন ‘জয়বাংলা’। অবশেষে হত্যা করে তাঁকে নৃশংসভাবে। একই সাথে হত্যা করে একই গ্রামের রামানন্দ রায়, রাম কুমার রায়, নান্টু রায়, চিত্তরঞ্জন রায় ও এই বাড়ির একজন অতিথিসহ ছয়জনকে। তাঁদের সবাইকে গ্রামের পাশের শ্যামা সুরমা নদীর তীরে পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। একই সারিতে আরো হত্যা করে ব্রজেন্দ্রগঞ্জ রাম চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক উপেন্দ্র রায় এবং সুখলাল রায় ও আকালি দাশকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে কোনো রকমে প্রাণে রক্ষা পান ব্রজেন্দ্র দাস। পুড়িয়ে দেয় গ্রাম। লুটপাট করে সর্বত্র।
গ্রামের উপেন্দ্র শীলকে ধরে নিয়ে হত্যা করে ঘুঙ্গিয়ারগাঁওয়ে। আর রাজাকাররা হত্যা করে রাজেন্দ্র রায়কে। এর আগে ৫ ডিসেম্বর এ গ্রামে এক যুদ্ধে শহীদ হন হেমেন্দ্র পুরকায়স্থ (চুন্নু), আবদুল হামিদ, হরিধন, আবদুল কুদ্দুছ ও আবদুল হান্নান। আহত হন জহরলাল তালুকদার, আবদুল করিম, ভূষণ তালুকদার ও প্রাণকৃষ্ণ সূত্রধর।
দিরাই থানার শ্যামারচরের দালাল আবদুল খালিকের বাড়িতে হত্যা করা হয় সুনামগঞ্জ মহকুমা ন্যাপ সভাপতি অ্যাডভোকেট সোনাওর আলীকে। সাথে পাষণ্ডরা হত্যা করে তাঁর নয় বছরের মেয়ে সিতারা বেগমকেও।
অক্টোবর মাসে আত্মগোপন অবস্থা থেকে ধরে ফেলে দালাল রাজাকাররা কুলঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরীকে। তারপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কুশিয়ারার অথৈ জলে নিক্ষেপ করে হত্যা করে তাকে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত