দমদমা ব্রিজ গণহত্যা, রংপুর
৩০ মে মধ্যরাত। কারমাইকেল কলেজ চত্বরে অতর্কিতভাবে ঢুকে পড়ল হানাদার বাহিনীর কভয়। খুঁজতে থাকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কোথায় থাকেন। হানাদার বাহিনীর গাড়ি থেকে নেমে এল ক’জন মুখোশধারী অবাঙালি। দখলদার বাহিনীকে চিনিয়ে দিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যাপকরা কে কোন বাড়িতে থাকেন। এক এক করে গাড়ির কাছে ধরে নিয়ে এল অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায় এবং অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়কে। শুরু করল রাইফেলের বাঁট দিয়ে বেধড়ক মারপিট। অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়ের পত্নী মঞ্জুশ্রী রায় সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো ঘাতকের দল তাঁকেও রেহাই দিল না। মারপিট করতে করতে গাড়িতে তুলি নিল সবাইকে। সবার বাড়িতে তখন মরাকান্না শুরু হয়ে গেছে। দখলদার বাহিনীর গাড়ি কারমাইকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেল দমদমা ব্রিজের কাছে। সেখানে গুলি করে হত্যা করল সবাইকে। পরদিন সকাল বেলা আশপাশের মানুষ সবার লাশ দেখে হতবাক। সবাই বুঝতে পারল দেশের শিক্ষিত সজ্জন কোনো বাঙালিকে রেহাই দেবে না হানাদার বাহিনী। মানুষ হত্যার নেশায় উন্মাদ হয়ে গেছে হায়নারা। অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষ বেঁচে থেকেও মৃতপ্রায়। প্রতি রাত তাদের কাছে মনে হতে থাকল-এ রাতই বোধ হয় জীবনের শেষ রাত।
একই স্থানে ৭ জুন হানাদার বাহিনী ৩ ট্রাক সাধারণ মানুষকে মধ্যরাতে দমদমা ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্থানীয় প্রবীণ লোকজনের বিবরণ থেকে জানা যায়, রংপুরের বাইরে থেকে এসব মানুষকে এনে হত্যা করা হয়। তাদের বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
[১৭৪] মুকুল মোস্তাফিজ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত