দক্ষিণ পৈলাবাগ গণহত্যা, সিলেট
বাসুদেবশ্রী, ত্রৈলোক্যবিজয় এবং কামালপুরের হত্যাযজ্ঞের সংবাদ অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পাশাপাশি গ্রামগুলোর মানুষজন। ফলে তাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু সবগুলো গ্রামের সমস্ত মানুষ তা পারেনি। যেমন সম্ভব হয়নি দক্ষিণ পৈলবাগের সূর্যমণিদের পক্ষে। তিনি তখন বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জ। পরিবার-পরিজন গ্রামছাড়া হলেও তিনি যেতে পারেননি। সূর্যমণির স্ত্রী মগ্নময়ী দেবীও স্বামীকে একা রেখে কোথাও পা বাড়াননি। তাই নিজ বাড়িতেই থেকে যান তাঁরা। এ সময় পাকসেনারা প্রধান সড়ক ছেড়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন বাড়িতে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থানরত দু-একজন লোকও সূর্যমণিদের বাড়িতে আশ্রয় লাভের আশায় আসছিল তখন। এই অবস্থায় দিগেন্দ্ৰ দেব যেইমাত্র সূর্যমণির বাড়িতে পা রাখেন ঠিক তখনই ধরাশায়ী হন বুলেটের আঘাতে। অগ্নিসংযোগও করে তারা সূর্যমণির বাড়িতে। নিজের বাড়ির সাথেই দগ্ধ হয়ে মারা যান সূর্যমণি দে এবং তাঁর স্ত্রী মগ্নময়ী দে। একত্রে যখন পুড়ছে তাঁদের গৃহ ও দেহ, তখনই পাশের বাড়ির আর এক বৃদ্ধ বিধবা কামাখ্যা রানী ধর এবং মদন দাস নামের একজন বৈষ্ণবকে ধরে এনে পাকবাহিনী উঠোনে দাঁড় করিয়ে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। একই গ্রামের দেবেন্দ্র দেব ও যামিনী মোহন ধরকে তারা ধরে নিয়ে যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে। সেখানেই গুলির আঘাতে ভূলুণ্ঠিত হয় তাঁদের দেহ। তারপর ফেলে দেয়া হয় এদের লাশগুলো মনু নদীর গর্ভে। মৃতদেহগুলো পরে আরশদ আলী নামের জনৈক দালাল ভাসিয়ে দেয় স্রোতস্বিনী মনু নদীর জলে। গ্রামের এক বিধবা সৌদামিনী দেব এবং অন্য একজন বৈষ্ণব গ্রাম ছেড়ে পালানোর মুহূর্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আট দিন পর তাঁদের লাশের সৎকার করা হয়। হানাদার দস্যুরা পুড়িয়ে দেয় সুধীর রঞ্জন দেব ও রাসবিহারি দেবের বাড়ি এবং মদন দাসের আখড়া।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত