You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.15 | তেরখাদা থানার গণহত্যা ও নির্যাতন | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

তেরখাদা থানার গণহত্যা ও নির্যাতন, খুলনা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তেরখাদা থানার পুলিশ স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা মতিউর রহমান ও ডা. হাবিবুল্লা বাহারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ও গ্রেফতারসহ বিভিন্ন প্রকার নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা তেরখাদা বাজার এলাকা ছেড়ে দূরবর্তী গ্রামসমূহে গোপনে অবস্থান নেয় এবং নেতৃবৃন্দ অস্ত্র ও জনবল সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ভারতে চলে যায়। এ সুযোগে স্থানীয় মুসলিম লীগ ও পিস কমিটির লোকরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ১৫ মে ভোরে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার বাহিনী প্রথম ‘তেরখাদায় প্রবেশ করে। তারা চিত্রা নদী দিয়ে গানবোটে তেরখাদায় প্রবেশ করেই চারদিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাজারের বিভিন্ন গলিতে বাড়ি-ঘরসহ সাহা পাড়া ও কাঞ্চনগাতি গ্রাম লুণ্ঠন করে ১৬২টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত করে দেয়। এ সময় তাদের গুলিতে ৯ জন নিহত হয়। সারাদিন ধরে এ ধ্বংসলীলা চালানার পর বিকেলে তারা খুলনা ফিরে যায়। ফেরার সময় ছাচিয়াদহ গ্রামে প্রবেশ করে ১২৫টি বাড়িতে লুটতরাজ চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে যায়। ৩০ মে তেরখাদার কাটেংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় অধিবাসী মো. রশীদ মোল্লার নেতৃত্বে স্থাপিত হয় রাজাকার ক্যাম্প। ১ জুন তারিখে রাজাকাররা প্রথমেই তেরখাদার বাজারের বড় ব্যবসায়ী নায়েব আতিকুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সরফরাজকে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হলেও পরের দিন তিনি মারা যান। জানা যায়, পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে রাজি না হওয়ায় রাজাকাররা তাঁর ওপর এই অকথ্য নির্যাতন চালায়। কিন্তু নির্যাতন সহ্য করেও তিনি তাদের পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার নির্দেশের জবাবে প্রতিবারই জয়বাংলা বলতে থাকেন। অবশ্য রাজাকার কমান্ডার রশীদ মোল্লা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে জানায় যে, তারা তাঁকে কেবল জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিয়েছে। রাজাকারদের দোষী সাব্যস্ত করতে ও এলাকায় তাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে মুক্তিযোদ্ধারাই তাঁকে হত্যা করেছে। রাজাকার কমান্ডার মো. রশীদ মোল্লা এক সাক্ষাৎকারে গণহত্যা, নির্যাতন বা লুটতরাজ করার কথা অস্বীকার করে জানায় যে, মুক্তিযোদ্ধারাই এলাকায় মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে ও তাদের বাড়ি লুটপাট করেছে এবং সে তার দলবল নিয়ে তাদের নাশকতামূলক কার্যাবলি প্রতিহত করে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা অব্যাহত রেখেছে। সে আরো জানায় যে, পাকসেনারা এলাকায় এসে কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তারা ভারতের দালাল ও বিদ্রোহীদের খোঁজ করে চলে গেছে।
তেরখাদা থানায় আর একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়। আজোগড়া গ্রামে। খুলনা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে এবং তেরখাদা ও রূপসা থানার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত এ গ্রামটি বিপ্র আজোগড়া, বিরি আজোগড়া ও রোস্তম আজোগড়া- এ তিনটি অংশে বিভক্ত। ২৭ এপ্রিল রাজাকার জুম্মান পাকসেনাদের নিয়ে এসে এ গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তারা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাড়ি লুটতরাজ কর অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। এ হামলায় ৪০ জন লোক নিহত হয় বলে জানা যায়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত