তেড়াবাঁকা গণহত্যা, সুন্দরবন, খুলনা
১৯৭১ সালে জুলাই মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে সুন্দরবনের মধ্যে তেড়াবাঁকা নামক খালের মধ্যে একটি মর্মান্তিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। ঐ সময়ে মঠবাড়িয়া থানার মাচুয়া ও তুষখালী অঞ্চল থেকে শরণার্থীদের একটি দল নৌকাযোগে বগী বন অফিসের নিকট আসামাত্রই শুনতে পায় যে, পাকবাহিনীর একটি গানবোট এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। শরণার্থীরা তখন নিজেদের বাঁচানোর জন্য কমান্ডার নুরু ক্যাশিয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী নৌকাযোগে তেড়াবাঁকা সিলভি কালচার অফিসের পাশ দিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে তেড়াবাঁকা খালের আগায়, যেখানটায় গামার খাল এসে শেষ হয়েছে, সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। পাকবাহিনী বগীতে অবতরণ করে শরণার্থীরা কোথায় তা জানতে চায়। ১৩ বছর বয়স্ক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমানকে ধরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে থাকে। প্রহারের এক পর্যায়ে সে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, শরণার্থীরা তেড়াবাঁকা খালের মধ্যে ঢুকেছে। তখন পাকবাহিনীর সদস্যরা মুজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ঢুকে শরণার্থীদের দেখতে পায় এবং শতাধিক শরণার্থীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। ঘটনার পরের দিন নুরু ক্যাশিয়ার চার-পাঁচটি লাশ নদী থেকে ভেসে যেতে দেখেছেন। একই গ্রামের মো. হেমায়েত উদ্দিন জানান যে, পরের দিন তিনি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে জড়িয়ে ধরা এক মহিলার লাশ ভেসে যেতে দেখেছিলেন। ঘটনায় যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী মুজিবুর রহমান জানান যে, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বয়রাতলা গ্রামের হিরণদের পরিবার ঐ গণহত্যার মধ্যে পড়েছিল এবং তাঁদের পরিবারের একাধিক সদস্য সেদিন মারা গিয়েছিলেন।
[১২৪] স্বরোচিষ সরকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত