ডিক্রিরচর গণহত্যা, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী ইউনিয়নের মুক্তি ক্যাম্পে আক্রমণ করে পাকসেনারা মধ্য রাতে। স্থানীয় রাজাকার সিদ্দিক মাস্টার ও রাজাকার কমান্ডার গুলজার বর্বর বাহিনীর পথপ্রদর্শক। রাতের অন্ধকারে বক্তাবলী ইউনিয়নের তিন দিক থেকে বর্বররা আক্রমণ চালায়। গোপালনগর, লক্ষ্মীনগর, আলীরটেক গ্রামের ভেতর দিয়ে হানাদাররা অগ্রসর হতে থাকে। বক্তাবলী ইউনিয়নের স্কুলগুলো ছিল মুক্তি ফৌজের ক্যাম্প। ২-৩ হাজার পাকসেনা রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিল। রাজাপুর, মুক্তারপুর, আলীরটেক, কুড়ের পাড়, ডিক্রিরচর, লক্ষ্মীনগর, মধ্যনগর গ্রামগুলো পরিণত হলো ধ্বংসস্তূপে। বর্বররা আধুনিক অস্ত্র মর্টার, মেশিন গান, লাইট মেশিনগান দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেল।
পাকসেনাদের ভয়ে শহীদুল্লাহ নামে এক মুক্তিযোদ্ধা একটি গর্তে আত্মগোপন করেন। ঐ দৃশ্য বর্বরদের চোখ এড়াল না। তাকে ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালাল। নিরীহ গ্রামবাসী যারাই হায়েনারদের সম্মুখে পতিত হয়েছে তাদেরই তারা বন্দি করেছে। আটককৃত লোকদের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ডিক্রিরচর জড়ো করে। ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে ১৩৯ জন লোককে পাষণ্ডরা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করল বর্বররা। এদের মধ্যে লক্ষ্মীনগর পূর্বপাড়া গ্রামের অধিবাসী ছিল বেশি।
খানসেনার ভয়ে গ্রামের ৪-৫ জন লোক মসজিদে আশ্রয় নেয়। পশুরা সেখান থেকে লোকগুলোকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে দাঁড় করায় মসজিদ সংলগ্ন খালের ঘাটে হত্যা করে।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত