You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.21 | ঝাউডাঙ্গা গণহত্যা | সাতক্ষীরা - সংগ্রামের নোটবুক

ঝাউডাঙ্গা গণহত্যা, সাতক্ষীরা

বাগেরহাট থেকে যাওয়া শরণার্থীদের অনেকে তৎকালীন খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমাধীন ঝাউডাঙ্গা স্থানে প্রাণ হারান। ঝাউডাঙ্গা সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার অন্তর্গত একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে সীমান্তের অতি কাছে অবস্থিত হওয়ায় এর গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এখানে একটা বড় বাজার রয়েছে। যেসব স্থানে শরণার্থীরা পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তার মধ্যে একটা ছিল এ ঝাউডাঙ্গা। ঘটনাটি ঘটে ২১ মে। এর পূর্ব দিন ২০ মে চুকনগরে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। চুকনগর হয়ে অনেক শরণার্থী ২০ মে-র হত্যাকাণ্ড থেকে আত্মরক্ষা করে পরদিন ২১ মে ঝাউডাঙ্গায় এ হত্যাকাণ্ডের কবলে পতিত হয়। এখানে জড় হওয়া শরণার্থীদের মধ্যে রামপাল, মোরেলগঞ্জ, দাকোপ, বটিয়াঘাটার লোকই ছিল বেশি। তারা যাত্রাবিরতি করছিল বাজারে। হঠাৎ সকাল ১১টার দিকে বেশকিছু পাক সৈন্য জিপ বোঝাই হয়ে সেখানে পৌঁছে যায়। তারা আসে সাতক্ষীরা থেকে। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে অবস্থিত। এ কারণে সৈন্যভর্তি জিপ যাওয়া-আসা ছিল একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এভাবে যে হঠাৎ জিপ থামিয়ে গণহত্যায় প্রবৃত্ত হবে তা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। এসব সৈন্য ঝাউডাঙ্গা ব্রিজের ওপর জিপ রেখে নেমে গুলি চালাতে আরম্ভ করে। প্রাণভয়ে পালাতে থাকে সবাই। অনেক শরণার্থী গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়ে। পাকা রাস্তার নিচে বিলের মধ্যে নেমে পড়েছিল বহু মানুষ। তাদের ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হতে থাকে। হানাদারেরা নিহত আহত সকলের পকেট হাতড়ে টাকা-পয়সা নিয়ে নিতে থাকে। যারা দূরে দৌড়ে পালাচ্ছিল তাদের উদ্দেশ্যেও হানাদারেরা গুলি ছোড়ে। শত শত লোক যেমন তৎক্ষণাৎ মারা যায় তেমনি অনেকে আহত হয়। প্রায় আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে পাক সৈন্যরা তাদের দোসরদের নিয়ে সরে পড়ে। রেখে যায় মৃত্যু আর ধ্বংসের কালো ছায়া। জল্লাদেরা এখানে সেদিন কত মানুষকে হত্যা করে তার কোনো হিসাব নেই। অন্যান্য স্থানের মতো এখানকার নিহতদেরও কোনো পরিসংখ্যান নেই বা তা অনুসন্ধানও করেনি কেউ। হানাদারদের এ আকস্মিক আক্রমণের মুখে পালাতে গিয়ে অনেকে পথ হারিয়ে ফেলে। কেউ কেউ পরে তাদের পরিবারের সাথে মিলিত হতে সমর্থ হলেও অনেকে তা পারেনি। হারিয়ে যাওয়া অনেক নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশু ভারতে গিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে বহু খোঁজাখুঁজির পর নিজ নিজ পরিবারের সাথে মিলিত হয়। আবার অনেকে একেবারেই হারিয়ে যায় যাদের খোঁজ আর পাওয়া
যায়নি।
[১১২] শেখ গাউস মিয়া

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত