ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর গণহত্যা, রংপুর
১৭ এপ্রিল ‘৭১। মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ শেষে সে স্থানের নামকরণ করা হয় মুজিবনগর দেশী-বিদেশী অসংখ্য সাংবাদিক আগ্রহভরে দেখছিলেন বাংলাদেশের পত্পত্ করে ওড়ানো পতাকা। সবুজের ওপর বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা যখন মুজিবনগরে উড়ছে ঠিক সে দিনই রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানার ৮নং রামনাথপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সবুজ ভূমি হাজারো বাঙালির রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সেদিন বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের পশ্চিমে ১ কিলোমিটার দূরে বৈরাগীর ঘুমটির কাছ থেকে দক্ষিণে বুজরুক হাজীপুর পর্যন্ত ঘিরে ফেলে। অপরদিকে খোলাহাটি স্টেশনের পূর্বদিকে ট্যাক্সের হাটের ঘুমটির কাছে দক্ষিণে করতোয়া নদীর গা ঘেঁষে বকশীগঞ্জ স্কুল পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে ঘেরাও করে বুজরুক হাজীপুর, খালিশা হাজিপুর, ঘাটাবিল, রামকৃষ্ণপুর, বছাশবাড়ি, বানিয়াপাড়া, খোদবাগবাড়, মাসানডোবাসহ আরো অন্যান্য এলাকার গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়। একই সাথে চালায় তারা গণহত্যা। ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে অলতিপর মানুষও রেহাই পায়নি পাকিস্তানিদের হাত থেকে। সে দিনের গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় পার্বতীপুরের বাচ্চু খান এবং কামরুজ্জামান। স্বাধীনতার পর এরা দুজনেই পালিয়ে যায় পাকিস্তানে। বেলা ২টা থেকে রামনাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে ধরে নিয়ে আসে ঝাড়ুয়ার বিল এবং পদ্মপুকুর এলাকায়। সেখানে গুলি করে হত্যা করে দেড় সহস্রাধিক মানুষকে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত চলে এ হত্যাকাণ্ড। তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যানুসন্ধানে প্রায় ৪০০ প্রাণদানকারী মানুষের বিবরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
[১৭৪] শাহ আব্দুর রাজ্জাক/মুকুল মোস্তাফিজ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত