ঝিলেখালি গণহত্যা, খুলনা
মে মাসের মাঝামাঝিতে আর এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড ঘটে ঝিলেখালি নামক স্থানে। ঝিলেখালি খুলনা জেলার দাকোপ থানার অন্তর্গত চালনা ইউনিয়নের একটা স্থান। চালনা বাজার তথা বর্তমান থানা সদরের চার-পাঁচ কিলোমিটার উত্তর- পশ্চিমে এ ঝিলেখালি অবস্থিত। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রা নদী। ঘটনাটি ঘটে ভদ্রা ও চুনকুড়ি নদীর সংগমস্থলে। এর এক তীরে রয়েছে খনারহাট এবং দাকোপ থানা অফিস (তখন ছিল, এখন তা চালনা বাজারে স্থানান্তরিত হয়েছে)। মে মাসের মাঝামাঝিতে চালনা বাজার এবং বাগেরহাটের বেতাগা, কালেখারবেড়, হুড়কা, সুকদাড়া, রাজনগর, দিনরাজ, বুড়িরডাঙ্গা প্রভৃতি স্থান থেকে বহু মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পরশ নদী হয়ে চালনা বাজারের পাশ দিয়ে এখানে এসে পৌঁছায়। কয়েকশত নৌকা এখানে জড়ো হয়ে জোয়ারের প্রতীক্ষা করতে থাকে। যাত্রীরা সব নৌকাতেই ছিল। অধিকাংশ নৌকার মহিলারা ব্যস্ত ছিল রান্নাবান্নার কাজে। তখন একটা গানবোট চলে আসে এবং এসব শরণার্থী নৌকার ওপর হামলা শুরু করে দেয়। শতাধিক মানুষ এই হামলায় নিহত হয়। বহু লোক আহত হয়। গানবোট দেখে অনেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বহু নৌকার মানুষ নৌকা ফেলে তীরে উঠে প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। এরা তখন সমাজবিরোধীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাদের ধরে ধরে সব কিছু কেড়ে নেয়া হতে থাকে। পালানো মেয়েদের কেউ কেউ স্থানীয় বখাটে যুবকদের দ্বারা লাঞ্ছিতও হয়। নিহতদের সবাই নদীতে ভাসতে থাকে। আহতদের নিয়ে শরণার্থীরা কোনোরকমে বিচ্ছিন্নভাবে সে স্থান ত্যাগ করে। শোনা যায় আহতদের অনেকে পথে মারা যায়। আহতদের দু-একজন ঐ স্থানে পড়ে থাকে। সঙ্গীরা তাদের না পেয়ে চলে যায়। এসব আহতরা সেখানে পড়ে থেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
[১১২] শেখ গাউস মিয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত