You dont have javascript enabled! Please enable it!

জান্দী গ্রাম গণহত্যা, ফরিদপুর

২ মে ভোর রাতে শতাধিক পাকসেনা ডাঙ্গা থানায় জান্দি পোদ্দার বাজার গ্রামটা ঘিরে ফেলে। সঙ্গে ছিল রাজাকার এমদাদ কাজী (হিঙ্গুল কাজী), হারুন মেম্বার, সাজাহান মাস্টারের দলবল। চারদিক থেকে ব্রাশফায়ার করতে করতে তারা অগ্রসর হয়। পলায়নরত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টনিক সেনকে ধরে নির্মমভাবে বেয়নেট চার্জ ও পরে গুলি করে হত্যা করে।
টনিক সেন ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি আওয়ামী লীগকে চাঁদা দেন, গাড়ি দেন এবং তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। শোনা যায় পাকসেনাদের দোসর হিঙ্গুল কাজীর কাছে টনিক সেনের বিরাট অঙ্কের টাকা পাওনা ছিল। টনিক সেন অনেক টাকা-পয়সা নিয়ে জান্দিতে আশ্রয়ের কথা হিঙ্গুল কাজী আগেই জেনেছিল। তাই হিঙ্গুল কাজী ও তার সহযোগীরা পাকসেনাদের সঙ্গে এ অপারেশনে অংশ নেয়।
টনিক সেনকে হত্যার পর ওরা বেছে বেছে আরো আঠারো জনকে কালীমোহন সেনের বাড়ির সামনে জড়ো করে নির্যাতন করে এবং তারপর মেশিন গান দেগে হত্যা করা হয়। জান্দি পোদ্দারের বাজারের পাশেই ছিল আশ্রম। সেই আশ্রমের মহারাজকে পূজারত অবস্থায় গুলি করলে তিনি প্রাণ হারান। পিছু ধাওয়া করে, ধরে এনে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আরো কয়েকজনকে। ঐ দিন মোট ৩১ জনকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন মধূসূদন সেন, কালাচাঁদ সেন, সোমেশ্বর সেন, সুধির সেন, বিনয় কৃষ্ণ সেন, শংকর সেন, সৃষ্টিধর সেন, ননী গোপাল দত্ত, পঞ্চানন সেন, গোবিন্দ চন্দ্ৰ চন্দ, অটা চক্রবর্তী, শ্রীমন্ত দত্ত, দেবদাস দত্ত প্রমুখ। পুরুষ ও বয়স্কদের বেছে বেছে হত্যা করে। নারী ও শিশুদের হত্যা পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়।
ঐ গ্রামের বাসিন্দা ও আশ্রয় গ্রহণকারী অনেকেই ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। অনেক মালামাল ও অর্থসম্পদ ওখানে গচ্ছিত ছিল যা তারা লুট করে নিয়ে যায়। বন্দুকের মুখে এলাকাবাসীকে দিয়ে লুটের মাল বহন করা হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!