জয়রাম আনোয়ার মৌজার গণহত্যা ও গণকবর, রংপুর
২২ এপ্রিল ‘৭১ বৃহস্পতিবার। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী রংপুর জেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে গুলি করে হত্যা করে ২৬ জন মানুষকে। এক নামে সারাদেশের মানুষ চেনে পায়রাবন্দকে। বাংলার নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান। পায়রাবন্দ ইউনিয়নের জয়রাম আনোয়ার মৌজার দুটি স্থানে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। রংপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পায়রাবন্দ। পায়রাবন্দ থেকে হাইওয়ে ধরে দক্ষিণ দিকে গিয়ে ১ কিলোমিটার দূরে জয়রাম আনোয়ার মৌজা। ২২ এপ্রিল মধ্যরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ৫টি ট্রাক এসে দাঁড়ালো বড় রাস্তায়। আশপাশে তেমন বসতি নেই। বড় রাস্তার পূর্ব দিকে দূরে ৩-৪টি ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর। গাড়ির শব্দে বাড়ির লোকজন জেগে উঠলেও কারো মুখে টু শব্দটি নেই।
পরদিন ভোরে আশপাশের গ্রামের লোকজন এসে দেখে বড় রাস্তার পূর্ব দিকে পড়ে আছে লাশের গাদি। লোকজন ভয়ে ভয়ে ১১টি লাশ একখানেই কবর দেয়। রাস্তার পশ্চিম দিকে আরো এক গাদা লাশ। সেখানে গ্রামবাসী পান ১৫টি লাশ। সব লাশেরই হাত বাঁধা অবস্থায় ছিল। পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট। গ্রামবাসী জানে না এরা কোথাকার মানুষ। কী তাদের পেশা, কী বা পরিচয়। সবাই ভয়ে ভয়ে থেকে কোনো ধর্মীয় নিয়মকানুন না মেনেই গর্ত করে মাটিচাপা দিয়ে রাখে লাশগুলো। চারদিকে পাহারা দিতে থাকে গ্রামবাসী কখন স্বাধীনতা বিরোধী লোকজন এসে পড়ে, কিংবা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর লোকজন চলে আসে। প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে লাশগুলোকে সামলাতে। সে দিন যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল তাদের সবারই একমাত্র পরিচয় ছিল তারা বাঙালি।
[১৭৪] শাহ আব্দুর রাজ্জাক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত