You dont have javascript enabled! Please enable it!

জুড়ী জনতা ব্যাংক ভবনের পেছনের বধ্যভূমি, মৌলভীবাজার

মুক্তিযুদ্ধের এক শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল মৌলভীবাজারের জুড়ী। প্রথম থেকেই পাক আর্মিদের দৃষ্ট পড়ে জুড়ীর ওপর। তারা স্থানটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। হানাদাররা জুড়ী দখল করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, খুন ও ধর্ষণ অত্যাচারের সবগুলোর শিকার হয় নিরীহ বাঙালিরা। বর্তমানে জুড়ী জনতা ব্যাংকের পেছনে ছিল বধ্যভূমি। জনতা ব্যাংকের পেছনে রয়েছে একটি পুকুর। স্বাধীনতা লাভের পর শফিকুল হক পাঠান ওসিসহ তৈমুছ আলী জুড়ীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে অনেক নরকঙ্কাল খুঁজে বের করেন। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জুয়াদ আলী, পিতা আবদুস সাত্তার, গ্রাম পাতিলাসাঙ্গন এবং দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রবের কঙ্কাল চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। তাদের স্বজনদের কাছে কঙ্কাল দেয়া হয়। বিকৃত লাশের মাঝে মেয়েদের শাড়ি, ব্লাউজের প্রচুর টুকরো পাওয়া যায়। এ বধ্যভূমির তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহকালে মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. জলিল মাসুক এক বুক কান্না নিয়ে লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেন। জুড়ী কামিনীগঞ্জ বাজারের ভবানীপুরের মজর আলীর পুত্র আবদুল মুতলিব পাকী এবং জুড়ীর তৈয়ব আলীর পুত্র আবদুল মোক্তাদির রাজাকারদের বীভৎস তাণ্ডব জুড়িবাসী কোনোদিন ভুলবে না। এম. এ. জলিল মাসুক বলেন, ‘আমার মা-বোনকে এ বধ্যভূমিতে বধ করার প্রায়স নিয়ে হাকালুকি পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে রাজাকার আবদুল মোক্তাদির ও আবদুন মুতলিব। শিলুয়া অপারেশনে আহত মুক্তিযোদ্ধা পাতিলাসাঙ্গন গ্রামের আবদুল নূর, জুয়াদ আলী ও কুটি মিয়াকে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। থানার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের সফিকুর রবের ভাগ্য নির্ধারিত হয় এ বধ্যভূমিতে। স্বাধীনচেতা রব স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম কাতারের সৈনিক ছিলেন। তাঁকে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করে পাক আর্মি। ঘোলষা গ্রামের নয়ানরাম দাসের ছেলে শ্রীনিবাস দাস ও ভ্রাতা হরি দাসকে বাড়ি থেকে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় পাকসেনারা গ্রেফতার করে। হরিদাস ছিলেন স্থানীয় ন্যাপ নেতা। বড়লেখা ক্যাম্প থেকে ২২ মার্চ তাদের নেয়া হয় জুড়ী বধ্যভূমিতে। নিহত হন হরিদাস নির্মমভাবে। বেয়নেট খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় শ্রীনিবাসের সমস্ত দেহ। গলায় চালানো হয় বেয়নেট। অকল্পনীয় পরিস্থিতি থেকে বেঁচে গেলেন শ্রীনিবাস। আজও তিনি স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে বেঁচে আছেন। গলায় বেয়নেট চালিয়ে জবাই করে শ্রীনিবাসকে। তারপর চলে যায় পাক আর্মিরা। মুমূর্ষু অবস্থায় কোনোমতে জুড়ী নদী দিয়ে ভাটির দিকে গিয়ে বহুকষ্টে বাড়ি ফিরে আসেন শ্রীনিবাস। ভারতে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
[১২] গোপাল দত্ত

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!