ছাতার গ্রাম গণহত্যা, সিলেট
গ্রামটির দূরত্ব সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে মাত্র দুই মাইল। এই গ্রামের বেশ কিছু লোক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে তখন প্রাণপণ যুদ্ধ করছেন। ব্যাপারটা সহ্য করতে পারল না পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকাররা। তাদের মাধ্যমেই মুক্তিবাহিনীর খবর পৌঁছে গেল পাক সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। আর খবর পাওয়ার সাথে সাথে তারা হানা দিল ওই গ্রামে। পাকবাহিনী এখানে পৌঁছে গ্রামে অবস্থানরত সকল বাঙালিকে একত্রে জড়ো করে শুরু করে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে আছাদ্দর আলীর ঘরে ঢুকে তারা সেখানেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার মুখে নিজের প্রাণ রক্ষা করতে ছুটে চলেছেন ওসমান আলী; কিন্তু বর্বরদের দৃষ্টি এড়াতে ব্যর্থ হলেন। তাকেও পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করার সময় নেই। কেননা, তাঁরা নিজেরাও পালিয়ে যাচ্ছেন যে যেদিকে পারেন।
এ গ্রামের দামাল ছেলেরা বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রাণ বিসর্জন দেন চারজন নিরস্ত্র বাঙালি। আর শিমুলতলা গ্রামে কিছু মুক্তিযোদ্ধা এসে অবস্থান গ্রহণ করায় যুদ্ধ সাজে সজ্জিত পাকসেনারা আক্রমণ করে সেই গ্রাম। অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আর ধরা পড়ে যান একজন একই সাথে গ্রাম থেকে তারা ধরে নিয়ে যায় সত্যগ্রামের কলিমউল্লাহ ও বাউরভাগ গ্রামের বাহাউদ্দিন আহমদসহ আরো দুজনকে। চারজন বাঙালির দেহই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বুলেটের পর বুলেটের আঘাতে। শহীদ হলেন সবাই। শিমুলতলায় আরো হত্যা করে তারা খুরশেদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে। আর ধর্ষণ করে আবদুল মান্নানের যুবতী বোনকে। বারকি গ্রামের কনাই মিয়াকেও (ইউপি সদস্য) হত্যা করে তারা বাড়ি থেকে ধরে এনে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত