You dont have javascript enabled! Please enable it!

জকিগঞ্জ গণহত্যা, সিলেট

বাংলার এক প্রান্তসীমায় অবস্থিত সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা সদর। কুশিয়ারা তীরসহ জকিগঞ্জ তিন দিক দিয়েই ভারতীয় ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত এবং সিলেট জেলা শহর থেকে ৫৬ মাইল দূরে অবস্থিত।
১৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কয়েকটি সামরিক জিপ জকিগঞ্জে এসে পৌঁছে। তাদের অভ্যর্থনা জানায় স্থানীয় দালাল ও রাজাকার। প্রভুদের আগমন সংবাদ শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় তারা এবং বিলম্ব না করে নিজেদের উদ্যোগেই ঘোষণা করল ১৪৪ ধারা। এ সময় দশ বছরের একটি বালক হয়তো কোনো জরুরি কাজে এসেছিল বাজারে। পিরেরচকের দূরপান আলীর পুত্র সে। ফরিদ উদ্দিন নামের অবোধ সেই বালককেও রাস্তায় কুকুরের মতোই গুলি করে হত্যা করে পাকসেনারা। ফরিদ উদ্দিনই জকিগঞ্জে স্বাধীনতার প্ৰথম বলি।
তারপর থেকে অসংখ্য মানুষের ওপর পাকসেনারা চালিয়েছে নির্যাতন। পুড়িয়ে দিয়েছে তারা গ্রামের পর গ্রাম। লুট করে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ, সাথে সাথে মা-বোনদের ইজ্জত। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে জামায়াত শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। এরাই জকিগঞ্জে গণহত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর করার পেছনে প্রধান সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেছে।
জকিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের পীরেরচকস্থ পরিত্যক্ত বাড়িকে পাক দস্যুরা তাদের ডেরায় পরিণত করে। অবশ্য অধিনায়ক ক্যাপ্টেন বসারত থাকত ডাকবাংলোয়। পাশেই মছকন্দের খাল। এই খালের পাড়ে আরেকটি পরিত্যক্ত বাড়িকে পরিণত করা হয়েছিল বধ্যভূমিতে।
১৯ এপ্রিল থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৭ মাসাধিক সময়সীমার ভেতরে কত সোনার ছেলে যে এই বধ্যভূমিতে প্রাণ দিয়েছেন, তার সঠিক হিসাব বের করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। তবে জানা গেছে, এঁদের সংখ্যা ৬০ জনেরও বেশি। হায়েনাদের বশংবদ শান্তি কমিটির সদস্য আর রাজাকাররা যাকেই তাদের ভাষায় পাকিস্তানের সংহতিবিরোধী বলে পরিচয় দিয়েছে, মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগাযোগ আছে বলে প্রমাণ পেয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা বলে সন্দেহ করেছে অথবা মুক্তিবাহিনীর তথ্য দিতে অস্বীকৃত হয়েছে, তাঁকেই ধরে নিয়ে গেছে সেই বধ্যভূমিতে। আর তাঁদের প্রাণ সংহার করেছে এই মস্তু মিয়া।
পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যেসব জকিগঞ্জবাসী তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁরা হলেন: ১. কেছরী আলমনগরের হাবিবুর রহমান; ২. কেছরীর ছতু মিয়া; ৩. চারিগ্রামের আনোয়ার হোসেন; ৪. আবদুল মুনিম তাপাদার; ৫. আমিলসিদের ফরিদ আলী; ৬. চারিগ্রামের মন্তাজ আলী; ৭. দৌলতপুরের জাফত আলী; ৮. কসকনকপুরের একরাম আলী, ৯. সহিদাবাদের নূর উদ্দিন প্রমুখ।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!