You dont have javascript enabled! Please enable it!

চাতলগাঁও গণহত্যা, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সদর থেকে মাইল দেড়েক দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রামের নাম চাতলগাঁও। কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের উত্তর-দক্ষিণ উভয় পাশেই চাতলগাঁও গ্রাম।
১৯৭১ সালের ৭ মে। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ১৯ মাইল দূরবর্তী কুলাউড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জলপাই রঙের সামরিক যান। টেংরা, ব্রাহ্মণবাজার অতিক্রম করে চাতলগাঁওয়ের পশ্চিমে কাপুরা নদীর সেতুর কাছে একে সময় উপস্থিত হয় গাড়িগুলো। অল্প কিছুক্ষণের মধেই পৌঁছে যাবে কুলাউড়ায়, কিন্তু এখানে স্তিমিত হলো তাদের গাড়ির গতি। বাধাপ্রাপ্ত হলো তারা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে। যে দুজন দেশপ্রেমিক এই প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন, তাঁরা হলেন কামারকান্দি গ্রামের আছকির আলী ও রামপাশার হবিব উদ্দিন। কিন্তু পাকবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাল্টা আঘাতের মুখে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। কিছুক্ষণ গুলিবিনিময় শেষে পালাতে উদ্যোগী হন তাঁরা; কিন্তু দুর্ভাগ্য তখনই উল্টে যায় তাঁদের জিপ। গুলিবিদ্ধ হন উভয়ে। আহত অবস্থায় পালাবার চেষ্টা করে পথিমধ্যে প্রাণ ত্যাগ করেন আছকির আলী ও হবিব উদ্দিন। আরজু মিয়ার পর এঁরা হলেন কুলাউড়ার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।
পাকবাহিনী এবারে প্রবেশ করে চাতলগাঁও গ্রামে। পাকিস্তানি সৈন্যদের আকস্মিক আগমন সংবাদে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু যাঁরা পালাতে পারেন নি, তাঁরা কৌশল হিসেবে পাকিস্তানি পতাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসেন; কিন্তু তাতেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। যাঁকে যে অবস্থায় পাওয়া যায়, তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী। নির্বিচার অত্যাচার শুরু করে গ্রামময়। তারপর বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাঁচজনকে তারা ধরে নিয়ে আসে গ্রামের মসজিদের পাশে। এঁরা হলেন- চাতলগাঁওয়ের আবদুল কুদ্দুছ ও কটু মিয়া, হিঙ্গাজিয়ার সিরাজুল ইসলাম এবং টেংরা এলাকার দুজন।
ধরে আনা পাঁচজনকে দাঁড় করানো হয় মসজিদের পূর্ব পাশে। তারপর বুলেটে বুলেটে তাঁদের বুকগুলোকে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। তবুও এঁদের ভেতর থেকে কটু মিয়া ও তাঁর অপর এক সঙ্গী গুলি ছোড়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে লাফ দিয়ে একটি গর্তে পড়ে যান। সেখানেও গুলি ছোড়া হয়। তাঁরা মারা গেছে ভেবে পাক পশুরা সেখান থেকে চলে যায়। শহীদ তিনজনের দুজন অর্থাৎ আবদুল কুদ্দুছ ও টেংরার এক শহীদকে পার্শ্ববর্তী গোরস্তানে দাফন করা হয়েছিল। শহীদ সিরাজুল ইসলামকে নিজ গ্রাম হিঙ্গাজিয়ায় নিয়ে গিয়ে গ্রামবাসীর কবরস্থ করে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!